উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাকে ‘ভিআইপি সুবিধা’ দেওয়ার নামে ফেরিযাত্রা প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রাখায় আহত স্কুলছাত্রের মৃত্যুতে নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ভিআইপিদের অযাচিত সুবিধা দিতে গিয়ে সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুবরণ করতে হবে এ ধরণের ঘটনা কোনো গণতান্ত্রিক দেশের চর্চা হতে পারে না। সংবিধান যেখানে সকল নাগরিকের নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেছে, সেখানে কোন বিশেষ শ্রেণির নাগরিকের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদানের এই বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক আচরণ প্রতিহত করতে এরূপ ব্যর্থতা কলঙ্কজনক।

তথাকথিত এই ভিআইপি সংস্কৃতি থেকে জনগণকে পরিত্রাণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে টিআইবি। সেই সঙ্গে নিহত তিতাস দাস এর পরিবারকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও সংশ্লিষ্ট দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থাটি।

ভিআইপি সুবিধার নামে জনগণের নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ হয়রানি বন্ধে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধার সুনির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ, সচিবালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানায় টিআইবি।

বিবৃতিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। অথচ এই দায়িত্বের সম্পূর্ণ অবহেলা করে ভিআইপি সুবিধার নামে ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে যেভাবে তিতাস-এর অকাল মৃত্যু হল তা কোনভাবেই কাম্য নয়।

তিতাসের পরিবারকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তথাকথিত ভিআইপি সংস্কৃতির এরূপ ব্যাপক অপব্যবহার রোধে সুনির্দিষ্ট সরকারি আদেশের মাধ্যমে ভিআইপি সুবিধার নামে জনগণের সকল প্রকার হয়রানি ও নিরাপত্তাহীনতা বন্ধ করার উপায় নিশ্চিতের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসনের নিকট বিশেষ আবেদন জানাচ্ছি।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, যারা জনগণের সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্রত, তাদের নিন্দনীয় ক্ষমতার অপব্যবহার ও গাফিলতির কারণেই এ ঘটনা সংঘটিত হতে পেরেছে উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, প্রচলিত চর্চার দোহাই দিয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার জন্য ‘ভিআইপি’ প্রটোকলের ব্যবস্থা করতে হবে- এ যেন এখন অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে, তাতে সৃষ্ট জনদুর্ভোগের বিষয়ে যেন কারও কোন দায় নেই। ঘটনা সংঘটনের পর প্রচলিত চর্চার দোহাই দিয়ে এ অনাচার এর দায় এড়ানোর প্রবণতাকে একইসাথে দুঃখজনক বলে অভিহিত করে ড. জামান বলেন, ‘‘সরকারের জন্য এ ধরণের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিব্রতকর। আমরা আশা করি, এ দুঃখজনক ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে জবাবদিহির আওতায় এনে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণ করে সরকার তা জনসাধারণকে অবহিত করবে।”
উল্লেখ্য ,নড়াইলের কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ গত বৃহস্পতিবার সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে তাকে আইসিইউ সম্বলিত একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বজনরা। সেদিন রাত ৮টায় অ্যাম্বুলেন্সটি যখন কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ফেরিঘাটে পৌঁছায়। কিন্তু সরকারের এটুআই প্রকল্পে দায়িত্বরত যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডলের গাড়ি ঘাটে না পৌঁছানো অপেক্ষা করার নির্দেশনা থাকায় প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে ঘাট থেকে ফেরি ছাড়ে। সেদিন মাঝ নদীতে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় ১১ বছর বয়সী তিতাস।