নতুন প্রজন্মের তিন ব্যাংকের আর্থিক সূচকে অবনতি ঘটেছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- পদ্মা, মেঘনা এবং এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পাঁচ শতাংশের বেশি হলে তা ঝুঁকি তৈরি করে।

অথচ এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সর্বনিু পাঁচ দশমিক ৭১ থেকে সর্বোচ্চ ৬৪ দশমিক ৪৩ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এর মধ্যে দুটি ব্যাংক আগ্রাসীভাবে ঋণ দিয়েছে। সে কারণে ঋণ দেয়ার যে সীমা তাও অতিক্রম করেছে উভয় ব্যাংক।

জানতে চাইলে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল যুগান্তরকে বলেন, নতুন নীতিমালা ঘোষণার আগে অনেকে কিস্তি পরিশোধ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ফলে মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আর এডিআর এখন যা আছে তা সন্তোষজনক। কারণ এডিআরের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নতুন ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ ছাড় রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) যাচাই-বাছাই ছাড়া এতটা আগ্রাসীভাবে ঋণ দিয়েছিল যে গ্রাহককে ঋণ দেয়ার নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত অতিক্রম করে ফেলেছে। এখন পর্যন্ত অতিক্রম করা সীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া নিয়মে পদ্মা ব্যাংকের ঋণ-আমানত রেশিও (এডিআর) হওয়ার কথা ছিল ৮৫ শতাংশ। (যদিও বর্তমানে এডিআর ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে) কিন্তু মার্চে ব্যাংকটির এডিআর ছিল ১১৮ দশমিক ০৮ শতাংশ।

অর্থাৎ ১০০ টাকা আমানত সংগ্রহ করে তার থেকে ৮৫ টাকা ঋণ বিতরণের কথা। কিন্তু পদ্মা ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ দিয়েছে ১১৮ টাকা ৮ পয়সা- যা আগ্রাসী ব্যাংকিং হিসেবে বিবেচিত। আবার যেসব ঋণ দিয়েছে তার বেশির ভাগই ছিল দুর্নীতিতে ভরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনেও বিষয়টি ওঠে এসেছে। ঋণ অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর গভীর তারল্য সংকটে পড়ে ফারমার্স ব্যাংক।

এমনকি আমানতকারীদের টাকা পর্যন্ত ফেরত দিতে পারছিল না ব্যাংকটি। তখন পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়। এরপর গত বছরের শেষের দিকে ব্যাংকটি উদ্ধারে সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও আইসিবি মিলে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন সহায়তা দেয়। এরপরই ফারমার্স থেকে রূপান্তরিত হয় পদ্মা ব্যাংকে। এসব কারণে গত মার্চ পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকের ৫ হাজার ৪০১ কোটি টাকা বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৩ হাজার ৪৭৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা- যা মোট ঋণের ৬৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর মধ্যে আবার ৩ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের ৫৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ মন্দমানের খেলাপি, যা ফেরত আসার সম্ভাবনা খুব কম।

মেঘনা ব্যাংকের ৩ হাজার ১১৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের বিপরীতে খেলাপি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৯০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ ব্যাংকেরও মন্দমানের খেলাপি ঋণ ১৯৪ কোটি টাকা- যা বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। এ অর্থও ফেরত আসার সম্ভাবনা কম। এডিআর সীমা অতিক্রম করেছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকও (এনআরবিসি)।

মার্চে ব্যাংকটির এডিআর ৮৫ দশমিক ৯৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে এনআরবিসির ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৮৪ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। তিন মাস আগেও এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ৯৪ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ।সূত্র-যুগান্তর