খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) লাইব্রেরিতে এক স্কুলছাত্রীকে এনে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে খুবির চারুকলা অনুষদের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে খুবি কর্তৃপক্ষ। ওই ছাত্রীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চারুকলা অনুষদের প্রিন্ট মেকিং ডিসিপ্লিনে অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র পাপ্পু কুমার মণ্ডলকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই ছাত্রকে তার সহপাঠীরা মুখে কালি লাগিয়ে ও জুতার মালা পরিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছেন।

গত ৩ জুলাই ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। তবে এত দিন ঘটনাটি বাইরে জানাজানি হয়নি। সোমবার ফেসবুকে ধর্ষণকারী ছাত্রের জুতার মালা পরানো ছবি পোস্ট করা হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, ওই দিন খুবির চারুকলা অনুষদে চিত্রকলা প্রদর্শনী ছিল। পাপ্পু ওই দিন তার পরিচিত ওই ছাত্রীকে প্রদর্শনী দেখানোর কথা বলে ক্যাম্পাসে ডেকে নেয়। এরপর তাকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে চারুকলার লাইব্রেরিতে নিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়েটি লাইব্রেরির সিঁড়িতে কান্নাকাটি করার সময় রাত সাড়ে ১২টার দিকে দারোয়ান তাকে দেখতে পান। ওই ছাত্রী খুলনার একটি গার্লস স্কুলে লেখাপড়া করেন।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, পাপ্পু ওই মেয়েটিকে পড়াত। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনার পর গত ১৫ জুলাই পাপ্পু বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে ছাত্ররা তাকে মুখে কালি লাগিয়ে ও গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন।

এ ব্যাপারে খুবির ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক শরীফ হাসান লিমন জানান, ৩ জুলাই রাতে ঘটনার পর ৪ জুলাই মেয়েটি লিখিত অভিযোগ করেন। ৫ ও ৬ জুলাই ছুটি থাকায় ৭ জুলাই মেয়েটির অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটির কাছে দেওয়া হয়। তিনি জানান, প্রাথমিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাপ্পুর একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। পাপ্পু এখন আর ক্যাম্পাসে আসে না।

যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. হোসনে আরা জানান, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। তবে ওই ছাত্রী এখনও মামলা করেননি। পাপ্পু আটকও হয়নি। এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বলেন, তারা ওই ছাত্রীকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন মামলা করেনি, তা তার জানা নেই।

হরিণটানা থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি তার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, পাপ্পু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ছাড়া রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক রয়েছে। পাপ্পু ও তার লোকজনের চাপে ওই ছাত্রী মামলা করতে সাহস পাননি।

আবার কেউ কেউ বলছেন, সামাজিকভাবে সম্মানহানির ভয়ে ওই ছাত্রী মামলা করেননি। তবে ওই ছাত্রী বা তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পাপ্পুর বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলায়।