যৌন আসক্তিকে একটি রোগ হিসেবে তালিকাভুক্তি এবং চিকিৎসার জন্য দাবি তুলেছে দাতব্য প্রতিষ্ঠান রিলেট। যুক্তরাজ্যের জাতীয় চিকিৎসা সেবার মধ্যে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করা হয়েছে। বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন এমন দুজন রোগী, যারা অনেকদিন এ সমস্যাটি মোকাবিলা করেছেন।

তিন সন্তানের জননী রেবেকা বার্কার বলেন, এটা ছিল অসহ্য একটি ব্যাপার যে, দিনে পাঁচবার যৌনমিলন করার পরেও তা আমার জন্য যথেষ্ট ছিল না। প্রতারণা করার বদলে তিনি তার সঙ্গীকে বারবার মিলিত হতে বলতেন। তিনি বলেন, ঘুম থেকে ওঠার পরে প্রথমে এটার চিন্তাই আমার মাথায় আসতো। অনেক চেষ্টা করেও সেটা আমি মাথা থেকে সরাতে পারতাম না।

নর্থ ইয়র্কশায়ারের ৩৭ বছরের এই বাসিন্দা বলেন, সব কিছুর সঙ্গে যেন আমি এর মিল খুঁজে পেতাম। আমি মনে করি, এটা আমার বিষণ্ণতা আর সেরোটোনিনের অভাবের সঙ্গে জড়িত ছিল। আমার পুরো শরীর যেন এটা চাইতো। যৌনমিলন করার পর আমি খানিকটা স্বস্তি পেতাম। কিন্তু পাঁচ মিনিট পরেই আবার আমার চাহিদা তৈরি হতো। বার্কারের এই সমস্যা তার সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। প্রথমে তার সঙ্গী বিষয়টি উপভোগ করলেও, পরে তা দুজনের মধ্যে জটিলতা তৈরি করে।

প্রথম দিকে সে ভালোই ছিল, কিন্তু পরে আর বুঝতে চাইতো না। পরে সে আমার বিরুদ্ধে অন্য সম্পর্ক করার অভিযোগও আনে। ২০১৪ সালের নভেম্বরে সে কিছুদিনের জন্য তার মার কাছে আলাদা থাকতে যান। এরপরই সম্পর্কটি ভেঙে যায়। সে রেবেকা বার্কার মানসিক চিকিৎসকের কাছেও যান। তিনি বারবার ওষুধ পাল্টে দিচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি কখনো বলেননি, এটার জন্য কোনো সহায়তা করার গ্রুপ আছে। এরপর তিনি বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার জন্য চাকরি ও স্থান পরিবর্তন করেন। এখন তিনি ফ্রান্সে বসবাস করেন। বিষণ্ণতা আর যৌন আসক্তি, দুটো থেকেই তিনি কাটিয়ে উঠেছেন।

রিলেট নামের দাতব্য সংস্থাটি বলছে, আর ১০টা আসক্তির মতো যৌন আসক্তিও একটি রোগ। ২০১৯ সাল নাগাদ এটিকে একটি রোগ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই রোগে আক্রান্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন ব্যক্তি জানান, তিনি এতটাই আসক্ত হয়ে গিয়েছিলেন যে, এক পর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে প্রতারণা করতে শুরু করেন।

তিনি বলেন, এটা ছিল ভয়াবহ, কষ্টকর অভিজ্ঞতা। যখন আপনার মাথায় সব সময়ে এটা কাজ করতে থাকে, তখন সেটা যৌন আনন্দ থাকে না, সেটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। এটা অনেকটা মদ্যপায়ী হয়ে ওঠার মতো ব্যাপার ছিল। যখন আপনার নেশা উঠবে, তখন এটা করতে হবে। কিন্তু এরপরে চরম অপরাধ বোধ কাজ করে। আমি ভাবি, আর কখনোই এটা করবো না। যখন তার স্ত্রী একটি ইমেইল দেখে বিষয়টি ধরে ফেলেন, তারপরে তার এই দ্বিচারণ বন্ধ হয়।

তিনি যুক্তরাজ্যের সেক্স এডিক্টস অ্যানোনিমাস বা এসএএ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হন। তখন তিনি দেখতে পান, তার মতো আরো অনেকে এই রোগে ভুগছে। দি অ্যাসোসিয়েশন ফর দি ট্রিটমেন্ট অফ সেক্স অ্যাডিকশন এন্ড কমপালসিভিটি বলছে, যৌন আসক্তি এখন বাড়তে থাকা একটি সমস্যা। গত কয়েক বছরে রোগীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, এদের বেশিরভাগই পুরুষ। যাদের ৩১ শতাংশ মানুষের বয়স ২৬ থেকে ৩৫ বছর।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা পাওলা হল বলেন, এই রোগীদের জন্য দরকার জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে বিনামূল্যের চিকিত্সা। কারণ এই রোগীরা ক্ষতির বিষয়টি বুঝতে পারেন। এখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাদের সহায়তা দরকার। তাদের জন্য এমন ব্যবস্থা থাকা দরকার যে, তারা সরাসরি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এর জন্য চিকিৎসা চাইতে পারবেন। কারণ এটা তাদের ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে, আর্থিক আর মানসিকভাবেও ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে।-বিবিসি বাংলা।