তৈরি পোশাক রফতানি মূল্যের ওপর অন্তত ৩ শতাংশ হারে নগদ সহায়তার দাবি জানিয়েছে বিজিএমইএ। সংগঠনের নেতাদের মতে, পোশাক খাতের অবস্থা ভালো নয়। অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে খাতটি। নগদ সহায়তাসহ আরও কিছু প্রণোদনা দেওয়া হলে ঘুরে দাঁড়াবে পোশাক খাত। এর ফলে আরও বেশি রফতানি আয় এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে লাভবান হবে দেশ।

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এই বক্তব্য দিয়েছে বিজিএমইএ। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। পোশাক খাতের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পোশাক রফতানিতে বর্তমানে বিভিন্ন হারে চার স্তরের নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। দেশি বস্ত্র ব্যবহারে ৪ শতাংশ, পোশাক খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে একই হারে নগদ সহায়তা রয়েছে। অন্য দুই স্তর হচ্ছে, নতুন বাজার ও নতুন পণ্যের বিপরীতে ৪ এবং ইউরো অঞ্চলের দেশি বস্ত্র ব্যবহারে ৪ শতাংশের অতিরিক্ত ২ শতাংশ নগদ সহায়তা। 

বিজিএমইএর দাবি ছিল, বহু স্তর বাদ দিয়ে সব রফতানির ওপর সমান ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা। প্রাকবাজেট আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) এবং অন্যান্য আলোচনায় এই দাবি জানানো হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বিদম্যান বহুস্তরে অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবকে যথেস্ট মনে করেন না বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। 

সংবাদ সম্মেলনে ড. রুবানা হক বলেন, ১ শতাংশ হারে দুই হাজার ৮২৫ কোটি টাকা অনেক কম। ডলারের বিপরীতে টাকা ১ টাকা হারে অবমূল্যায়ন হলে তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা বেশি পেতেন রফতানিকারকরা। এ সময় প্রতিযোগি বিভিন্ন দেশে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের কথা জানান তিনি। 

পরিস্থিতি ব্যাখ্যায় বনের গল্পের প্রসঙ্গ এনে রুবানা হক বলেন, পোশাক খাতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে এই প্রণোদনা মানতে পারছি না। দয়া করে পোশাক খাতকে বনের পরাজিত বিড়াল বানাবেন না।

এসময় পোশাক খাতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথায় মূল্য সংযোজন না হওয়া, লিডটাইম, পণ্যে বৈচিত্র্যের অভাব, উদ্ভাবনী না থাকা, ডলার বিপরীতে টাকার প্রতিকূল হার, ছোট কারখানায় রফতানি আদেশ কমে আসার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সহ-সভাপতির মধ্যে ফয়সাল সামাদ বলেন, ভালো নেই পোশাক খাত। ঋণ করে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। 

এ প্রসঙ্গে এস এম মান্নান কচি বলেন, এবারের ঈদে বেতন-বোনাস নিয়ে বেকায়দায় ছিলেন তারা। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এবং কোন কোন কারখানার মেশিন বিক্রি করে সব শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। 

মশিউল আলম সজল বলেন, পোশাক খাতে নগদ সহায়তা আসলে সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ। কারণ, এতে রফতানি বাড়ে, কর্মসংস্থান বাড়ে। 

শরীফ জহির বলেন, রফতানি প্রতিযোগিতায় একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ে আছে পোশাক খাত। তবে সরকারের কাছ থেকে নীতি সহায়তা পাওয়া গেলে রফতানি বাড়িয়ে ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোন সমস্যা হবে না।

সরকারের প্রশংসা করে ড. রুবানা হক বলেন, গত ১০ বছরে দেশে স্বপ্ন দেখা এবং দেখানোর কাজটি শুরু হয়েছে। তারাও চান ঘরে ঘরে উদ্যোক্তা তৈরি হবে। বিভিন্ন কারণে সেটা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে এগুচ্ছেন বাকিরা সেভাবে সেভাবে এগুচ্ছে না। আগামী ৫ বছর প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে থাকলে পোশাক খাত এগিয়ে যাবে। 

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রুবান হক বলেন, আমাদেরকে আপনার ভালোবাসায় সিক্ত করুন, বিশ্ববাজারে আমরা সুনামের সঙ্গে দাঁড়াতে চাই। কোন দুর্নাম যাতে না থাকে। ছোট কারখানাগুলোকে যাতে বাঁচিয়ে রাখা যায়।

বিজিএমইএর অন্য দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ডলার প্রতি অতিরিক্ত ৫ টাকা বিনিময় হার বাড়ানো, নতুন উদ্যোক্তা এবং গবেষণার পৃথক তহবিলে পোশাক খাতকে অর্ন্তভুক্ত করা, সামাজিক সুরক্ষা খাতে শ্রমিকদের অর্ন্তভুক্ত করা ইত্যাদি।