একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এমপিদের শপথ নেওয়াসহ দলের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে বিএনপির চার এমপির শপথ নেওয়া, সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী দেওয়া, বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রার্থী করার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং ওই আসনে জিএম সিরাজকে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দলীয় ফোরামে আলোচনা না করে কীভাবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মহাসচিবের সঙ্গে দলের একজন প্রবীণ নেতার বাদানুবাদের সময় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপে উপস্থিত থাকলেও কোনো মন্তব্য করেননি। পরে স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বিকেল সাড়ে ৫টায় বৈঠকের শুরুতে স্থায়ী কমিটির শীর্ষ দুই নেতা মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে দলের চার এমপির শপথ নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান। তারা বলেন, শপথ নেওয়ার আগের দিন সর্বশেষ বৈঠকেও সংসদে না যাওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য ছিলেন। কিন্তু পরের দিন তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তে সংসদে যাওয়ার ঘোষণা দেন। স্থায়ী কমিটির কেউ কিছু জানে না। আপনি (মহাসচিব) বললেন, শপথ নেওয়া দলের সিদ্ধান্ত। নিজে শপথ নিলেন না। আবার বললেন, আগের নেওয়া সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। এভাবে একেক সময়ে একেক বক্তব্য দিয়ে স্থায়ী কমিটিকে অপমান করা হয়েছে।

বৈঠকে শীর্ষ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের কিছু জানানো হয়নি। বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী তালিকায় দলের প্রধান কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে রাখার বিষয়েও তাদের অন্ধকারে রাখা হয়। এত বড় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং মনোনয়নপত্রে তার (খালেদা জিয়ার) স্বাক্ষরের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মনোনয়নপত্র পাঠানোর ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন নেতারা। বগুড়া-৬ আসনের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে জিএম সিরাজকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতারা বলেন, জিএম সিরাজ ওই আসনের নেতা না হওয়ার পরও তিনি কীভাবে মনোনয়ন পেলেন? এ সময়ে একজন সিনিয়র নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি কার ব্যাগ ক্যারি (বহন) করছেন? এ মন্তব্যের পর বিএনপি মহাসচিব ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কেন এমন মন্তব্য করা হলো তা জানতে চান।

সূত্র জানায়, দলের সিনিয়র নেতাদের এমন প্রশ্নবাণে জর্জরিত বিএনপি মহাসচিব তাদের জানান, তিনি যা কিছু করেছেন তা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় করেছেন। এখানে তার কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা ব্যক্তিগত মতামত ছিল না। এর পরিপ্রেক্ষিতে নেতারা জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। তবে তাকে গাইড করতে মাঠের প্রকৃত চিত্র জানানোর জন্য মহাসচিবকে মূল ভূমিকা পালন করতে হয়। এ জন্য দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তার (বিএনপি মহাসচিব) শলাপরামর্শ করার দরকার ছিল। 

দলের বিভিন্ন ইস্যুতে শীর্ষ নেতাদের এমন চাপের মুখে মির্জা ফখরুল ইসলাম এক সময়ে তাদের জানান, এভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। পরে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়। 

এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির এক নেতা সমকালকে জানান, যা হয়েছে তা ভালোই হয়েছে। সবার মধ্যে ক্ষোভ ছিল। একজন স্থায়ী কমিটির নেতার বক্তব্যের মাধ্যমে সবার বক্তব্য উঠে এসেছে। ক্ষোভ প্রশমিতও হয়েছে। দলের ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আগামীতে তাদের দল পরিচালনায় আত্মশুদ্ধির দরকার ছিল। সুত্র-সমকাল