কৃষকের সঙ্গে মসকরা না করতে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের প্রতি অনুরোধ করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ। তিনি বলেছেন, আপনি কৃষকের সঙ্গে মশকারা করতে পারেন না। আপনি, আমি কৃষকের ভোটে, কৃষকের দয়ায় সংসদে এসেছি।

আজ বুধবার জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ তাঁর ফেসবুকে খাদ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে এসব কথা বলেন। হুইপের সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো :

‘কৃষকের সঙ্গে

দয়া করে মশকারা করবেন না

ক্ষমতা কি মানুষকে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দেয়? আমার জানা মতে, সুস্থ চোখ অন্ধ হতে সময় লাগে। কিন্তু মাত্র চার মাসে ধানের ভাণ্ডার নওগাঁর গাঁও-গেরাম থেকে উঠে আসা খাদ্যমন্ত্রী গাঁয়ের কৃষকদের সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক ভুলে গেলেন! অন্ধ হয়ে গেলেন এসির ঠাণ্ডা বাতাসে!

তিনি বলেছেন, সরকারকে বিব্রত করার জন্য না কি কৃষক ষড়যন্ত্র করে পাকা ধানে আগুন দেওয়ানো হয়েছে!!

কৃষককে ধানের মূল্য দিতে পারবেন না, বিনয়ের সঙ্গে সম্মানিত কৃষকদের সীমাবদ্ধতার কথা অবহিত করুন। সমস্যা কোথায়? অসীম সমস্যার এই দেশে সব কিছু রাতারাতি ঠিক হবে না, এ কথা বিনয়ের সঙ্গে বললে মানুষ গ্রহণ করবে।

একজন অসহায় কৃষকের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকেও সহ্য করতে পারবেন না? আপনি তো সামরিক স্বৈরাচারের মন্ত্রী নন। আপনাকে স্মরণ রাখতে হবে, আপনি পরম ধৈর্যশীল, পরমতসহিষ্ণু, উদার গণতান্ত্রিক বিশ্বসেরা রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রী এবং তাঁর সম্মানিত সহকর্মী। উপরন্তু আপনি তেলতেলে আমলা বা ব্যবসায়ী কোটার মন্ত্রী নন। তৃণমূল থেকে কাঁদামাটি গাঁয়ে মাখা রাজনীতিবিদ। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে ধাপে ধাপে ধান আবাদি মানুষের সহযোগিতা, সমর্থনে আজকের পর্যায়ে এসেছেন। অন্তত আপনি কৃষকের সঙ্গে মশকারা করতে পারেন না। আপনি, আমি কৃষকের ভোটে, কৃষকের দয়ায় সংসদে এসেছি।

আগুন দিয়েছে নিজের ক্ষেতে, আপনার পাঞ্জাবিতে দেয়নি। তাতেই সহ্য হচ্ছে না! শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারটুকুও দেবেন না কৃষককে। কৃষক বলে কি তাদের প্রতিবাদ করার অধিকার নেই!! প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল পদে থেকে অসহিষ্ণু হওয়া সমীচীন নয়।

কৃষক উৎপাদন করে, ন্যায্য মূল্য পায় না। এ কথা অন্য রাজনীতিবিদ না জানলেও আপনার, আমার অজানা নয়। ধানের দামের খোঁজ নেন, প্রতি মুহূর্তে নিজের ম্যাকানিজম দিয়ে খবর নেন। অফিসারদের ওপর শতভাগ নির্ভরশীল থাকবেন না। দেখেন, হাটে বাজারে ধানের প্রকৃত দাম কত? আপনি এই মন্ত্রণালয়ে নতুন। কথিত আছে, এই মন্ত্রণালয়ে অধীনস্থ খাদ্য বিভাগের শুধু কর্মচারী নয়, অফিসের দেয়ালও না কি ঘুষ চায়। ভূমিমন্ত্রীর মতো সচল হোন, দুর্নীতির জঞ্জাল পরিষ্কার করুন।

কৃষককে প্রতিপক্ষ ভেবে সময় নষ্ট না করে, বিনয়ের সঙ্গে কৃষককে আর কিছুদিন ধৈর্য ধরতে বলুন। প্রতিবেশী ভারত বা অন্য কোনো দেশে ধানের আধুনিক সাইলো বা গুদাম পরিদর্শন করুন। নিজে লেগে থেকে প্রকল্প প্রস্তুত করে একনেকে অনুমোদন করান। দেশে বড় বড় ধানের সাইলো নির্মাণ করুন। বিনা কমিশন বা ঘুষে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয়ের ব্যবস্থা করুন। তবেই কৃষক বাঁচবে। কৃষকরত্ন শেখ হাসিনার স্লোগান, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।

সরাসরি কৃষক এর আগে খাদ্যমন্ত্রী হয় নাই। মহান প্রধানমন্ত্রী শখ করে কৃষককে খাদ্যমন্ত্রী এবং কৃষিবিদকে কৃষিমন্ত্রী বানিয়েছেন। আমরা, আপনাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি, আস্থা রাখি, বিশ্বাস রাখি। আপনি এবং কৃষিমন্ত্রী একত্রে বসে কৃষকদের কল্যাণে বড় কিছু করুন, তাদের বাঁচান।

জাতির পিতার আত্মা শান্তি পাবে।’