অপরাধ সংবাদ | তারিখঃ জানুয়ারি ২৩, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 629 বার
কুমিল্লায় দ্বিতীয় স্বামীর দেওয়া বাড়িতেই চতুর্থ স্বামীর হাতে নাছিমা আক্তার নামের এক গৃহবধূ খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার রাতে কুমিল্লা নগরীর শাকতলার বাড়ি থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। এ ঘটনার পর শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন নিহতের স্বামী মেহেদী হাসান।
নিহতের পরিবার, স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার জায়েকবাজার এলাকার প্রবাসী আলমগীর হোসেনের সঙ্গে গত ১৫ বছর আগে বিয়ে হয় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভুলুইন দক্ষিণ ইউনিয়নের মগের কলমিয়া গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে নাছিমা আক্তারের। এ সংসারে নাইমুর রহমান অনি নামে তাদের এক ছেলে হয়। কিছুদিন পর প্রবাসী আলমগীর হোসেনকে তালাক দিয়ে তার আপন ছোট ভাই প্রবাসী শহীদ উল্লাহকে বিয়ে করেন নাছিমা। এ সংসারেও নাজিমুর রহমান অমি নামে এক ছেলে রয়েছে। দাম্পত্য জীবন সুখের করতে শহীদ উল্লাহ তার স্ত্রী নাছিমা আক্তারের নামে কুমিল্লা নগরীর শাকতলায় সাড়ে ৩ শতক জমি কিনে একটি টিনসেট বাড়ি নির্মাণ করে দেন। ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে দেন। শহীদ উল্লাহ প্রবাসে চলে যাওয়ার পর হুমায়ুন কবির নামে এক যুবকের সঙ্গে নাছিমা অবাধে চলাফেরা শুরু করেন। এক পর্যায়ে শহীদ উল্লাহকে তালাক দিয়ে হুমায়ুনকে বিয়ে করেন নাছিমা। এ বিয়েও বেশিদিন টিকেনি। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে নাছিমার পরিচয় হয় জেলার বরুড়া উপজেলার আগানগর গ্রামের বাসিন্দা ও বরুড়া বাজারের ব্যবসায়ী মেহেদী ফ্যাশনের মালিক মেহেদী হাসানের সঙ্গে। নাছিমা নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে ৩০ লাখ টাকা কাবিনে মেহেদীকে বিয়ে করেন। পরে নাছিমার বহুবিবাহের বিষয়টি জানতে মেহেদী তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ দেন। এর জেরে নাছিমার দায়ের করা যৌতুকের মামলায় জেলে যেতে হয় মেহেদীকে। পরে মেহেদীর পরিবারের হস্তক্ষেপে নাছিমা মামলা প্রত্যাহার করে মেহেদীকে মুক্ত করেন। এরপর তারা নতুন করে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। সালমান জাহিদ ত্বকী নামে এ সংসারে তাদের দেড় বছরের এক শিশু সন্তান রয়েছে। অনি নোয়াখালীর পিতার বাড়িতে থাকে। অমি মায়ের সাথে থেকে কুমিল্লা নগরীর শাকতলা হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ত্বকী মা-বাবার সঙ্গে থাকত।
অমি জানায়, ২১ জানুয়ারি সোমবার বিকালে স্কুল থেকে সে ফিরে এসে দেখে বাড়ির গেইটে তালা ঝুলছে। তার মা-বাবার মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে সন্ধ্যায় সে বাড়ির দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে দেখে তার মায়ের মৃতদেহ কম্বলে মোড়ানো অবস্থায় পড়ে আছে। ঘরে কেউ নেই। এ অবস্থায় সে চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন ওই বাড়িতে আসেন। খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন ও সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মামুন অর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নিহত নাছিমার ভাই মনির হোসেন বলেন, ‘ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব রুমের বক্স খাটের উপর নাছিমা আক্তারের লাশ কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখেছিল ঘাতক। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে, গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার পর থেকে নাছিমার স্বামী মেহেদী তার ছেলে ত্বকীকে নিয়ে পালিয়েছেন।’
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মামুন অর রশিদ জানান, ‘নিহতের গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। ঘাতক গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply