জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 438 বার
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ২৪ ডিসেম্বর থেকে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাতীয় নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে উত্থাপিত কার্যবিবরণীতে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ছাড়াও অন্যান্য কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জানানো হয়, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন অনুযায়ী ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিপত্রের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেবে।
বৈঠকে জানানো হয়েছে, ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে সেনাবাহিনী। প্রতি জেলায় ছোট আকারে সেনাবাহিনীর একটি টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে দেশের ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন এবং সার্বিক দিক লক্ষ্য রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচনের আগে-পরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে, মেট্রোপলিটন এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ও বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য অঞ্চল, দীপাঞ্চল ও হাওর) পৃথক সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এছাড়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহিংসতাপ্রবণ এলাকাগুলোর জন্য থাকবে আলাদা সতর্কমূলক ব্যবস্থা।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভোট কেন্দ্রের পাহারায় মেট্রোপলিটন এলাকার সাধারণ কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৬ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ ৩-৫ জন, অঙ্গীভূত আনসার ১১ জন ও গ্রাম পুলিশের একজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৭ জন ও অস্ত্রসহ ৪-৬ সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ থাকবে ন্যূনতম চারজন।
মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৪ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ একজন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন ও গ্রাম পুলিশের দু-একজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৫ জন ও অস্ত্রসহ তিন-চারজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন; এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকবেন ন্যূনতম দুজন।
অন্যদিকে পার্বত্য এলাকা, হাওর, দ্বীপাঞ্চলকে বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৫ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ দুজন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন ও গ্রাম পুলিশের ১-২ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৬ জন ও অস্ত্রসহ ৪/৫ সদস্য নিযুক্ত থাকবেন; এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকবেন ন্যূনতম তিনজন।
ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ভোট গ্রহণের দুইদিন আগে এবং ভোটের দিন ও ভোটের পরের দিনসহ চারদিন মাঠে থাকবেন। আনসার সদস্যরা ভোট গ্রহণের তিন দিন আগে মাঠে নেমে থাকবেন পরের দিন পর্যন্ত। এ ছাড়া আগামী ২৪ থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনোদিন মাঠে নামবে সেনাবাহিনী। তবে এর আগে ১৫ ডিসেম্বর থেকে পরিস্থিতি অবলোকন (রেকি) করবেন তারা। সেনাবাহিনীর প্রতিটি টিমের সঙ্গে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশের সদস্যরা জেলা, উপজেলা ও থানাসমূহে মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন। তারা রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদার ভিত্তিতে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনাকক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে থাকবেন। এ ছাড়া ইভিএমের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বেও থাকবেন।
অন্যদিকে র্যাব স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে এবং নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে।
নির্বাচনী সামগ্রী আনা-নেয়া, নির্বাচন কার্যালয়সমূহের নিরাপত্তা, ভোট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে পুলিশ। সর্বোপরি ভোটারদের জন্য আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তারা কাজ করবে। নির্বাচনে পুলিশের ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৭ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আচরণবিধি প্রতিপালনে এক হাজারের বেশি জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। প্রার্থী ও সমর্থকদের আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবেন ৬৫২ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
Leave a Reply