নোয়াখালীর চ্যাঞ্চল্যকর চমক হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। প্রেম ঘটিত কারনে হত্যা করা হয়েছে নোয়াখালীর সোনাপুর ডিগ্রি কলেজের অনার্স (সম্মান) হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তাবাছসুম তানিয়া চমক (২২)কে ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ।

এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- জেলা শহরের জয়কৃষ্ণপুর এলাকার এনামুল হক উকিল বাড়ীর শাহাজাদা এনামুল হক হিমেলের মেয়ে তাসনিম তাহসিন চাঁদনী (১৯), তার স্ত্রী সাজেদা আক্তার নিপু (৪০) ও সদর উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের আব্দুল্যা মাস্টার বাড়ীর আব্দুল্যা চৌধুরীর ছেলে জাহিদুল ইসলাম সোহেল (৩০)।

জানা গেছে, অনার্সে পড়া অবস্থায় তাপস নামের এক হিন্দু সহপাঠীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে চমক। আর এই সম্পর্ক চলতে থাকে দিনের পর দিন। সময়ের সাথে সাথে তাদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। ঘটনার ৫/৬দিন আগে ডাক্তার দেখানোর জন্য চমকের বাবা শাহজাদ এনামুল হক হিমেলের সাথে সাজেদা আক্তার নিপু ঢাকায় যান। এসময় মাইজদী পৌর বাজার সংলগ্ন জয়কৃষ্ণপুর বাসায় শুধু চমক এবং তার ছোট বোন চাঁদনী ছিল।
গত ১১ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে ট্রেনে করে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরেন চমকের মা নিপু। এসময় মা এর অনুপস্থিতিতে চমক প্রেমিক তাপসের সাথে সারাদিন কথা নিয়ে ব্যস্ত ছিল বলে মাকে অবগত করে চাঁদনী। তখন রাত সাড়ে ১০টা। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত চমককে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে নির্যাতন করে তার মা। এর একপর্যায়ে চমক মেঝেতে পড়ে গেলে চাঁদনীর শরীর থেকে ওড়না টেনে নিয়ে চমকের গলায় পেঁছিয়ে শ্বাসরোধ করে চমককে হত্যা করে তার মা। পরে নিপু তার ছোট ভাই জাহিদুল ইসলাম সোহেল এর সহযোগিতায় ওড়না দিয়ে টেনে ঘরের পাশের একটি ডোবার মধ্যে চমকের লাশ ফেলে দেয়।

ঘটনার পরের দিন (১২ নভেম্বর) নিহতের মা সাজেদা আক্তার নিপু রেলস্টেশনে তাকে এগিয়ে আনতে গিয়ে চমক নিখোঁজ হয় এই মর্মে থানায় একটি জিডি করেন। ঘটনার ৩ দিন পর (১৫ নভেম্বর) বিকেলে তাদের বাসার পাশের ডোবা থেকে চমকের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতে তার প্রেমিক তাপসকেও আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে এই ঘটনায় নিহতের মা ও মামাকে আটক করে পুলিশ।

জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ জানান, শুক্রবার তাসনিম তাহসিন চাঁদনীকে নোয়াখালী বিচারিক আদালত-২’এ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহেব উদ্দিন খাঁনের আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে সে ফৌজাদারী কার্য বিধি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে সে ঘটনার বিবরণ দেয়।

তিনি আরো জানান, এই ঘটনায় নিহতের বাবা শাহজাদা এনামুল হক হিমেল বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-২১। আসামিদের মধ্যে চাঁদনীকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। নিপু ও সোহেলের ১০দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।