ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত, বিদেশে অবস্থানরত এমনকি মৃত ব্যক্তিদের ভিত্তিহীনভাবে ‘গায়েবি মামলায়’ পুলিশের আসামি করার প্রবণতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ জাতীয় দৃষ্টান্ত পুলিশের অদক্ষতা ও দায়িত্বে অবহেলার পরিচায়ক, উল্লেখ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এমন আত্মঘাতী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে “গায়েবি মামলা” দায়েরের ঘটনা ঘটেছে। মামলার আসামি হিসেবে ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত, বিদেশে অবস্থানরত এমনকি মৃত ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে পুলিশের একাংশের এহেন কর্মকাণ্ড পেশাদারত্বের উদ্বেগজনক অবক্ষয়ের দৃষ্টান্ত।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সরকার তথা ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নির্দেশনা বা চাপের ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাংশের দলীয় প্রভাবে প্রভাবান্বিত হওয়ার দৃষ্টান্ত নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ তথা অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা অনেকাংশে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। তা সত্ত্বেও পুলিশ বাহিনীর একাংশ কর্তৃক ঢালাওভাবে ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই এমন ব্যক্তিদের মামলায় জড়ানোর দায় শুধু রাজনৈতিক প্রভাবের ওপর দেওয়া যাবে না।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠান পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হলেও কী কারণে মৃত ও দেশে বা ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে তা দেশবাসীর কাছে ব্যাখ্যা করার দায় পুলিশ কর্তৃপক্ষের। প্রশ্ন উঠতেই পারে, ‘এটি কি পুলিশের একাংশের একান্ত অদক্ষতা না নগ্ন দায়িত্বহীনতা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব একদিকে যেমন আইনের শাসনের পথে অন্যতম প্রতিবন্ধক, অন্যদিকে পুলিশ বাহিনীতে এ ধরনের পেশাগত দুর্বলতা ও অদক্ষতা অব্যাহত থাকলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা সম্পূর্ণ ধসে পড়বে বিধায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

বিবৃতিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত করার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে আহ্বান জানায় টিআইবি । একই সঙ্গে, পুলিশ বাহিনীকেও সব ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালনে দৃঢ়তা ও সৎসাহসের পাশাপাশি জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংস্থার অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবীক্ষণ ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে এ জাতীয় আত্মঘাতী প্রবণতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।