আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে পরস্পরবিরোধী দুই রাজনৈতিক শক্তির সমাবেশের আগে ঢাকা দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল।

ক্ষমতাসীন জোটের মুখপাত্র , আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘তথাকথিত ঐক্যের নামে বিএনপি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। এ কারণে তারা অসাংবিধানিক দাবি আদায় করতে পরিত্যক্ত, জনবিচ্ছিন্ন ও দলছুট নেতাদের ভাড়া করেছে। তবে তাদের এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না। এখন থেকে ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা রাজপথসহ সারাদেশের মাঠ দখলে রাখবে। কোনও চক্রান্ত-নৈরাজ্য হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা প্রতিহত করব। চক্রান্তকারীরা পরাজিত হবেই। মাঠ গরম করার নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না।’

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মহানগর ১৪ দল আয়োজিত এক প্রস্তুতি সভায় তিনি এ কথা বলেন। মহানগর নাট্যমঞ্চে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের (শনিবার) বিকাল ৩টায় ১৪ দলের সমাবেশ কর্মসূচি সফল করতে এই প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘চক্রান্তকারীরা মাঠে নামবে। আমরা দেখবো, কারা মাঠে নামবে আর কে নামবে না? আগে থেকেই ঢাকা দখলে ছিল আমাদের, ইনশাল্লাহ আগামীতেও ঢাকা আমাদের দখলে থাকবে। শুধু ঢাকা নয়, রাজপথসহ সারাদেশের মাঠ শেখ হাসিনার দখলে থাকবে।’

জোটের নেতাকর্মীদের যেকোনও চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা এলাকায় প্রস্তুত থাকবেন, যেন ওই অপশক্তি মাঠে নামতে না পারে। ওদের মাঠে প্রতিহত করবেন, রাস্তায় প্রতিহত করবেন। আগামী এক মাস জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় সজাগ থাকতে তিনি ১৪ দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘নির্বাচনের প্রচারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে জেলা-উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারের কাজ শুরু হয়েছে। ১৪ দলের শরিক দলগুলোও দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনের প্রচারের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আমরা চাই, এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হোক। কিন্তু যখন কোনও পরিত্যক্ত রাজনীতিবিদরা, দলছুট রাজনীতিবিদরা, যাদের আদর্শের কোনও ঠিকানা নেই, দলের কোনও স্থায়ী ঠিকানা নেই, তারা গণতন্ত্রের কথা বলেন; তখন আমাদের সন্দেহ হয় যে, আবারো সেই অসত্ চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে।’

বিএনপির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ভাড়াটিয়া এনেছেন, পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। যেই দলকে ভাড়াটিয়া নিয়ে খেলতে হয়, সেই দলকে জনগণ কোনোদিনও ভোট দিবে না, সমর্থনও করবে না।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সংবিধান অনুয়ায়ী নির্বাচন হবে ৫ বছর পর পর এটা একটা নিয়ম। এখান ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘যখনি দেশে গণতন্ত্রের লড়াই হয়েছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে তখন এই মুখ চেনা মহলটি নানান অজুহাত তুলে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য চক্রান্ত করছে। এ দেশে যতগুলো অবৈধ শাসন এসেছে তাদের পেছনে এরা মদদ দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের মানুষ সব সময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে।’

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী সিডিউল ঘোষণা করবে তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। সেখানে কি কারণে তথা কথিত ঐক্যের নামে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কি আছে?’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সঠিক কিনা জানি না পেপারে দেখলাম বিএনপি বলেছেন আওয়ামী লীগের কৌশলই আমরা অবলম্বন করেছি। বিএনপিকে উদ্দেশ্যে করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কৌশলের দেখেছেন কি আপনারা। ভবিষত্ আওয়ামী লীগের কৌশল আরো দেখবেন। আওয়ামী লীগের কৌশল পরাজিত হয় না।’ বিএনপির উদ্দেশ্যে মোহাম্মদ নাসিম আরও বলেন, ‘আপনারা এক এক সময় এক এক দলে থাকেন। আপনাদের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই।’

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের উদ্দেশে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আমরা এত দিন দেখেছি খেলার সময় খেলোয়াড় ভাড়া করা হয়, এখন দেখছি ড. কামাল হোসেনের মতো নেতারাও ভাড়ায় যাচ্ছেন। আমাদের সঙ্গে খেলবেন, খেলেন। কোনো সমস্যা নেই। ভাড়াটে খেলোয়াড় দিয়ে কি কখনো জয় পাওয়া যায়? যায় না। যাদের নিজেদেরই কোনো অস্তিত্ব নেই তারা অন্য দলে গিয়ে কি অস্তিত্ব পাবে?’

২৯ সেপ্টেম্বরের সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ১৪ দলের প্রোগ্রামে আসবেন। সেখানে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা বক্তব্য রাখবেন। ঢাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে এ বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। ২৯ তারিখ ১৪ দলের সমাবেশ। আপনারা আপনাদের এমপিকে নিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে যান। কোনো বাহিনী নয়, ১৪ দলের নেতাকর্মীরাই ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করার জন্য যথেষ্ট।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, গণতন্ত্রী পার্টির ডা. শাহাদাত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. অসীত বরণ রায়, জাসদের মীর হোসেন আক্তার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।