হিন্দু পুরাণোক্ত কামদেব বা মদন প্রেম ও কামের দেবতা। তার কীর্তি-কাহিনী কথিত হয়েছে বিভিন্ন পুরাণে। কথিত আছে, সতীর দেহত্যাগের পরে কামদেবের তিরে আহত হয়েই পার্বতীর প্রতি আকৃষ্ট হন শিব। অবশ্য কৃষ্ণের উপর কামদেবের কোনও প্রভাব খাটেনি। অজস্র গোপিনীর সঙ্গে রাসলীলায় মত্ত হওয়ার পরেও কৃষ্ণের মনে গোপিনীদের প্রতি বিন্দুমাত্র কামবাসনা জাগ্রত হয়নি। কিন্তু তেমন ইন্দ্রিয়জয়ী পুরুষ আর ক’জন হতে পারেন। ফলে কামদেবের ধনুকের তিরের প্রভাব আপামর জীবজগতের উপরই কার্যকর।

পুরাণ মতে, মদন হলেন ভগবান বিষ্ণু ও দেবী লক্ষ্মীর সন্তান। প্রেমের দেবী রতি তার স্ত্রী। তবে কোন কোন পুরাণকাহিনীতে মদনকে ব্রহ্মার সন্তান হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সন্তান তিনি যারই হোন না কেন, তার কাজ জীবজগতে কাম ও প্রেমের জন্ম দেওয়া। জীবজগতের স্থিতির জন্য কাম ও প্রেমের অবদান অনস্বীকার্য। তাই হিন্দু ধর্মে মদনকে গন্ধর্ব বা অর্ধদেবের মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। মনে করা হয়, কামদেবকে সন্তুষ্ট করতে পারলে নিজের বা়ঞ্ছিত মানুষকে আকর্ষণ করে নিতে পারেন যে কেউ। এবং কামদেবকে সন্তুষ্ট করার একমাত্র উপায় তার পূজা নয়, বরং উপযুক্ত উপচারসহ কামদেব মন্ত্র জপ করলেও বাঞ্ছিত মানুষকে লাভ করা সম্ভব। কিন্তু কীভাবে কার্যকর হয় সেই মন্ত্র?

প্রকৃত অর্থে কামদেব মন্ত্র হল এক ধরনের বশীকরণ মন্ত্র। অর্বাচীন কালের তন্ত্রাচারে এই মন্ত্রের প্রয়োগ রয়েছে বলে শোনা যায়। বলা হয়, কাম্য নারী বা পুরুষকে আকর্ষণ, পুরনো প্রেমকে ফিরে পাওয়া, কিংবা প্রেমের বাধা দূরীকরণের মতো কার্যসিদ্ধি সম্ভব এই মন্ত্রের সাহায্যে। ঠিক কী করতে হয় এই মন্ত্রের সুফল ভোগ করতে হলে? বলা হচ্ছে, কোন এক শু‌ক্রবারে শুরু করতে হয় এই মন্ত্রের জপ। প্রথমে ফুল ও ধুপ-ধুনোসহ পূজা সারতে হয় কামদেবের। তারপর প্রজ্জ্বলিত করতে হয় বিশুদ্ধ ঘি-এর দীপ। তারপর একটি কাগজে নিজের ভালবাসার মানুষের নাম লিখে শুরু করতে হয় মন্ত্রোচ্চারণ। মন্ত্রটি এরকম: ‘‘ওম কামদেবায় কামবশম করায় অমুকস্য (প্রার্থিত ব্যক্তির নাম সহযোগে) হৃদয়ম স্তম্ভয়’’ ইত্যাদি। এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয় ১০৮ বার। এমনটা টানা তিন সপ্তাহ প্রতিদিন করতে পারলেই নাকি কাঙ্ক্ষিত মানুষ ধরা দেবে মন্ত্রজপকারীর কাছে।

কিন্তু কীভাবে সেটা সম্ভব? তান্ত্রিকরা দাবি করছেন, মন্ত্র জপের মাধ্যমে তুষ্ট হন কামদেব। তারপর, যিনি মন্ত্র জপ করছেন, তার ভালবাসার মানুষের হৃদয় লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করেন তার ফুলশর। তিরবদ্ধ মানুষটিও তখন মন্ত্র জপকারীর প্রতি আকর্ষণ বোধ করা শুরু করেন। ফলে অভীষ্ট লাভ সম্ভব হয়।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই মন্ত্র-তন্ত্রের কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না। কিন্তু তন্ত্রশাস্ত্রে এটাও বলা হচ্ছে যে, মন্ত্রজপকারীর ভালবাসা যদি খাঁটি হয়, এবং যাকে সে কামনা করছে সে যদি সত্যিই তার প্রাপ্য হয়, তবেই একমাত্র কাজ করবে এই মন্ত্র। আসলে এটাই বড় কথা। ভালবাসা খাঁটি না হলে যে ভালবাসার মানুষকে কাছে পাওয়া যায় না, তা অস্বীকার করার উপায় নেই মন্ত্র-তন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষজনেরও।

সূত্র: এবেলা