সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে গিফট দেয়ার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎকারী আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য ১৫ জন নাইজেরিয়ানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গ্রেফতারকৃতরা আমেরিকান নারী সেনা অফিসারের ফেইক ফেসবুক আইডি‘র মাধ্যমে বন্ধুত্ব করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের গিফট্ দেওয়ার নামে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে সিআইডি সূত্রে জানা যায়।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্লবীসহ বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, এনজুবেচুকোউ এউগেন দারা (৩০), চুয়াউমা জন ওকেচুকোউ (৪০), উচেন্না দামিয়ান এমেইসিয়ানি (৩০), চিসম অ্যান্থনি একোয়েঞ্জি (৩৫), সাইমন ইফেচুকোউয়েদে ওকাফর (৩০), হেনরি ওসিতা ওকেচুকোউ (৩১), আইফিনয়ি জনপল চিনউইজে (৩২), ওকেকে পিটার (৩২), এমেকা দোনাতাস (৪৮), গোজি ওনইয়েদো (৪৭), পিটার চিকা আকপু (৪৮), ওবিন্না সানডে (৪০), এনওয়ান্না ইয়াং (৩৪), জেরেমিয়াহ চুকউদি এজেওবি (৩৪) ও স্টিফেন ওজিওমা ওবাইকোয়েজে (৩৪)।

তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৯টি ল্যাপটপ, ২২টি মোবাইল ও ৫টি হিসাবের ডায়েরি উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস্িরব্রফিংয়ে এসব তথ্য জানান এডিশনাল ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার। সিআইডির অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, আমেরিকান নারী সেনা অফিসারের ভুয়া ফেসবুক আইডি ও হোয়াট্স অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রেফতারকৃতরা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে তাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ব্যক্তিগত আকর্ষণীয় ছবি পাঠিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে। পরবর্তীতে মেসেজের মাধ্যমে তার অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেন তিনি ইয়েমেন, আফগানিস্তান বা সিরিয়াতে আছেন। তার কাছে কয়েক মিলিয়ন ডলার রয়েছে কিন্তু ওই দেশে যুদ্ধ চলমান থাকায় যেকোনো সময় সেগুলো নষ্ট হতে পারে। তাই নতুন বন্ধুকে ডলার বা এই মূল্যমান সম্পদ গিফট করতে চান। যদি বেঁচে থাকে তাহলে এগুলো পরে ফেরত নেবে বলেও জানান।

সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, এই ধরনের প্রলোভন দিয়ে প্রথমে বন্ধুদের ঠিকানাসহ মোবাইল নম্বর সংগ্রহ এবং ওই ঠিকানায় বন্ধুদের মেসেঞ্জারে অথবা হোয়াট্স অ্যাপে গিফট প্যাকেটের ছবি পাঠায়। পরবর্তী মেসেজে যেকোনো একটি এয়ারলাইনসে গিফট প্যাকেটটি বুকিং দেয়া হয়েছে এরকম রশিদের ছবি পাঠায়। ঠিক দুই দিন পর বন্ধুর (ভুক্তভোগীর) মোবাইলে ফোন করে ভিডিওকলে এয়ারপোর্ট কাস্টমস অফিসে থাকা গিফট প্যাকেট দেখায় এবং কাস্টমসের ভ্যাট বাবদ বিভিন্ন ধাপে টাকা দিতে বলেন। এভাবে এক সরকারি চাকরিজীবীসহ অসংখ্য লোকের কাছ থেকে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ওই সরকারি চাকরিজীবীর কাছ থেকেই হাতিয়ে নিয়েছে সোয়া ৫ লাখ টাকা।

রেজাউল হায়দার সাংবাদিকদের জানান, ওই ভুক্তভোগী পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিআইডিকে জানান। আবার টাকা চেয়ে ফোন করলে সিআইডির একটি দল হাতেনাতে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দানকারী মোবাইল, ল্যাপটপসহ বিপুল পরিমাণ আলামত জব্দ করে তাদেরকে গ্রেফতার করে।

তারা দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা তথ্যে ও অসদুপায়ে ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান করে ডলার বা গিফট দেয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন। গিফট দেয়ার নামে এ পর্যন্ত তারা বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছে।

তিনি আরো বলেন, তারা ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে গিফট দেয়ার নামে প্রতারণামূলকভাবে নিজ নিজ দেশের সহযোগী ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা একটি আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র। তাদের সহযোগিরা প্রত্যেকটি দেশে অবস্থান করছে।

উল্লেখ্য, প্রায় একই কায়দায় প্রতারণার অভিযোগে ইতোপূর্বে ২ জুলাই, ৩ জন ও ২১ জুলাই ১৩ জনকে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের সাথে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হওয়া ১৫ জনের প্রত্যেকটা ঘটনায় প্রতারণার টাকা গ্রহণে ব্যবহৃত একটা বা একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম মিলে যাচ্ছে।

তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পল্লবী থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।উৎস -নয়া দিগন্ত