যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সোমবার দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হলো।

জনাব নুরুল ইসলাম ১৯৪৬ সালের ৩ মে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জে। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর নাগপাশ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার মানসে ১৯৭৪ সালে যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠা করেন। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প এবং সেবা খাতে গড়ে তোলেন ৩৮টি প্রতিষ্ঠান।

তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম একজন সংসদ সদস্য। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা সালমা ইসলাম জাতীয় পার্টির একজন শীর্ষ নেতা। এ দম্পতির সংসারে আছে ১ পুত্র ও ৩ কন্যা। ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তিন মেয়ে- রোজালিন ইসলাম, মনিকা ইসলাম এবং সোনিয়া ইসলাম যমুনা গ্রুপের পরিচালক।

নিজ যোগ্যতায় অল্পদিনেই নুরুল ইসলাম বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্প উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন। তার প্রতিষ্ঠিত যমুনা গ্রুপ দেশের অন্যতম প্রধান ব্যবসায়ী গ্রুপ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে নুরুল ইসলাম একজন আধুনিক চিন্তার সাহসী উদ্যোক্তা। বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছেন যমুনা গ্রুপে। এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক, যমুনা নির্মাণাধীন মেরিয়টস হোটেলসহ শিল্প ও সেবা খাতে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে গ্রুপটি। ইলেকট্রনিকস, বস্ত্র, ওভেন গার্মেন্টস, রাসায়নিক, চামড়া, মোটরসাইকেল, বেভারেজ টয়লেট্রিজ, নির্মাণ এবং আবাসন খাতে ব্যবসায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই গ্রুপ।

গণমানুষের সুবিধা, অসুবিধা, বঞ্চনা ও অধিকারের বিষয় তুলে ধরতে তিনি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। সত্যের সন্ধানে নির্ভীক স্লোগান নিয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা করে এসেছে পত্রিকাটি। গণমাধ্যমে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার মানসে তিনি চালু করেন যমুনা টেলিভিশন। তার অনুপ্রেরণায় ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কারণে অল্পদিনেই দেশের শীর্ষ টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে জায়গা করে নেয় যমুনা টেলিভিশন। জনাব নুরুল ইসলাম মৃত্যুতে একজন নির্ভীক ও দায়িত্বশীল অভিভাবক হারালো প্রতিষ্ঠান দুটির সহস্রাধিক কর্মী।

গত ১৪ জুন নুরুল ইসলামের করোনা শনাক্ত হয়। সেদিনই রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও এতে তার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশিষ্ট এই শিল্পোদ্যোক্তার চিকিৎসায় এভারকেয়ারের ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহবুদের নেতৃত্ব ১০ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এর বাইরে চীনের ৪ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়েছেন।

করোনার চিকিৎসায় রাজধানীর কুড়িলে ৩০০ ফিটের কাছে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন নুরুল ইসলাম। ইতিমধ্যে এর প্রাথমিক আলোচনাও শেষ করেছিলেন তিনি। করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকার অনুদানও দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া করোনা মোকাবেলায় সহজ ও সুলভমূল্যে যমুনা গ্রুপ তৈরি করছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। স্বাস্থ্যসম্মত পিপিই তৈরি বিতরণ করেছেন করোনা প্রতিরোধের সম্মুখযোদ্ধাদের।উৎস -যমুনাটিভি