নতুন জীবন শুরুর আগেই নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমাকে (২০) কেড়ে নিলো পদ্মা। ডুবে গেল তার জীবনের সব সাজানো স্বপ্ন।সাজটা ঠিক নববধূর মতোই আছে, শুধু প্রাণটাই নেই। রাজশাহী নগরীর সাহাপুর এলাকায় নববধূর লাশটি সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ভেসে ওঠে।

রাজশাহীর পদ্মা নদীতে রোববার তৃতীয় দিনের মতো নিখোঁজদের সন্ধানে অভিযান অব্যাহত থাকে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বর-কনেবাহী দু’টি নৌকাডুবির পর গত শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজ ৯ জনের মধ্যে ছয়জনের এবং গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত আরো দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অবশেষে নিখোঁজ নববধূর লাশ পাওয়া গেল।

এ ছাড়া গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ডুবে যাওয়া দ্বিতীয় নৌকাটিও নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে শনিবার দুপুরে উদ্ধার করা হয় অপর নৌকাটি। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় স্বজন হারানোর শোকে নিহতদের বাড়িতে এখনো মাতম চলছে।

রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, দু’টি নৌকায় বর-কনেসহ অন্তত ৩৬ জন যাত্রী ছিলেন।

রাজশাহীর নৌ-পুলিশ পরিদর্শক মেহেদী মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে নয়জনে দাঁড়িয়েছে। যে নয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেন, কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (১৬), পূর্ণিমার দুলাভাই রতন আলী (৩০), তার মেয়ে মরিয়ম খাতুন (৬), কনের চাচা শামীম হোসেন (৩৫), স্ত্রী মনি খাতুন (৩০), তাদের মেয়ে রশ্মি খাতুন (৭), তাদের আত্মীয় এখলাস হোসেন (৩৫), কনের ফুফাতো বোন রুবাইয়া খাতুন স্বর্ণা (১৩) এবং কনের খালা আঁখি খাতুন (২৫)।

তিনি আরো জানান, নিখোঁজ সবার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে সোমবার সকালে পাওয়া গেল কনের লাশ। এর আগে রোববার দুপুরে রুবাইয়ার লাশ উদ্ধার করেন জেলেরা। জাল ফেলা হলে তার লাশ উঠে আসে। রুবাইয়ার বাবার নাম রবিউল ইসলাম রবি। তাদের বাড়ি পবার আলীগঞ্জ মোল্লাপাড়ায়। সে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।

এরপর বিকেলে রাজশাহীর চারঘাট সীমানার ভেতরে পদ্মা নদীতে আঁখি খাতুনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আঁখি খাতুনের বাবার নাম আবুল হোসেন। তার বাড়ি পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামে। আঁখি খাতুনের স্বামীর বাড়ি নগরীর ভাটাপাড়ায়। তার নাম আসাদুজ্জামান জনি। তিনি হড়গ্রাম পূর্বপাড়ার বাসিন্দা। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন বর আসাদুজ্জামান রুমন। নৌকাডুবির পর শুক্রবার রাতেই বালু তোলা ড্রেজার নৌকা দিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে সেখান থেকে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

কনে পূর্ণিমার বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামে। তার বাবার নাম শাহিন আলী। আর বর আসাদুজ্জামান রুমন (২৬) পদ্মা নদীর ওপারে একই উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামের ইনসার আলীর ছেলে। রুমন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়। নগরীর নিমতলা এলাকায় তাদের বাড়ি আছে। এ বাড়িতে রুমন একাই থাকেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকেন চরের বাড়িতে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো: হামিদুল হক জানান, এরই মধ্যে নিহতদের স্বজনদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আহতদের চিকিৎসার ব্যয় ভার বহন করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।