দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী সোমবারের মধ্যে এ বিষয়টি আদালতকে জানাতে বলেছেন। গতকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে, সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর তিনটি নির্দেশনা এবং কেউ যেন ভীতি সঞ্চার না করে সে বিষয়ে সচেতনতার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছেন আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে- এ মর্মে প্রকাশিত সংবাদ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী আদালতের নজরে নিয়ে এলে উচ্চ আদালত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তিনটি মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালতে বিষয়টি নজরে আনেন অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান।
এগুলো হলো- ১. প্রত্যেকটি হাসপাতালে বা বন্দরগুলোতে যেখানে শনাক্তের জন্য করোনা ভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজন হবে সেখানে সরঞ্জামগুলো পর্যাপ্ত রয়েছে কিনা, যদি না থাকে জরুরি ভিত্তিতে আমদানি করার জন্য সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী ৯ই মার্চের মধ্যে এ বিষয়ে আদালতে জানাতে হবে। ২. স্থলবন্দর, নৌবন্দর, বিমানবন্দর, বিশেষ করে বিমানবন্দরে যখন বিদেশিরা বাংলাদেশে আগমন করছেন, তখন অভ্যন্তরে প্রবেশের পূর্বে তাদের কি ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে, যারা পরীক্ষা করছেন তারা প্রশিক্ষিত কি না এবং যে যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেগুলোর সক্ষমতা রয়েছে কিনা তা জানাতে বলেছেন।
৩. সারা বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা ভাইরাসের জন্য পৃথক কেবিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রাক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সব বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও করোনা ভাইরাসের জন্য প্রাক প্রস্তুতিমূলক সব ধরনের ব্যবস্থা (পৃথক কেবিনসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম) গ্রহণ করতে হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী ইসরাত হাসান বলেন, গত বছর আমরা দেখেছি, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কী অবস্থা দাঁড়িয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের সব জাতীয় দৈনিকে প্রতিদিনই খবর প্রকাশিত হচ্ছে, জীবনঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। খবরের মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি, বিদেশ থেকে যাঁরা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন, করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য তাদের যথাযথ পরীক্ষা করা হচ্ছে না। পরিচিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ন্তণে যে হিমশিম অবস্থা, সেখানে অজানা করোনাভাইরাস নিয়ে কেমন অবস্থা দাঁড়াতে পারে? এসব বিষয়কে সামনে এনে আদালতের নাজরে এনেছিলাম।
এদিকে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জাতীয় মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেছেন। আগামী রোববার বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে। রিটে স্বাস্থ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিমান ও পর্যটন সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট আটজনকে এই নোটিশ পাঠানো হয়। রিটে করোনাভাইরোস প্রতিরোধে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মনিটরিং সেল গঠন, সারা দেশে পর্যাপ্ত মাস্ক সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়।