প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নিজস্ব স্থায়ী কার্যালয় পেল মহান স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।শনিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এই ভবন উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আধুনিক এ ভবনের চাবি তুলে দেন নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এ সময় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল সাড়ে ৯টার কিছু পরে নতুন কার্যালয়ের সামনে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এরপর মঞ্চে উঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের শুরু করেন তিনি। এরপরই সবাই মিলে জাতীয় সঙ্গীতে সুর মেলান।
জাতীয় সঙ্গীতের পর শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে স্থায়ী দলীয় কার্যালয় ভবনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এরপর আওয়ামী লীগ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দেশ ও জাতির জন্য দোয়া করে মোনাজাত করা হয়।
উল্লেখ্য,প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের অফিস স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে ৮ থেকে ৯ বার। প্রতিষ্ঠার পর পালাক্রমে সিনিয়র নেতাদের বাসায় বসেই দল পরিচালনার নীতি-কর্মসূচি গ্রহণ করা হতো।

১৯৫৩ সাল থেকে ৯ কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি অফিস ব্যবহার করে কার্যক্রম হতো। এরপর ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬ সিমসন রোডে দলের অফিস করা হয়। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর এর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলের অফিস নেন।

এর কিছুদিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে কিছুদিন বসেন নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দুটি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল। সর্বশেষ ১৯৮১ সালের দিকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেয়ার পর ২৩ বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হয়। সেই থেকে এখনো এখানেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় রয়েছে।

২০১৬ সালে এটিকে যুগোপযোগী এবং আধুনিক করার লক্ষে পুরনো ভবন ভেঙে ১০ তলা ভবন করার কাজে হাত দেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। সে লক্ষে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই শুরু হয় পুরনো স্থাপনা ভাঙার কাজ। ।
দীর্ঘদিনের পুরনো ও জরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙে সেখানেই গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বহুতল ভবন।দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন রাজধানীর ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর নতুন এই দশতলা ভবন এখন থেকে আওয়ামী লীগের স্থায়ী ঠিকানা। ৮ কাঠা জায়গার ওপর ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে বিশ্বমানের দলীয় কার্যালয়টি। পুরো ভবনই ওয়াইফাই জোনের আওতাধীন বলে জানানো হয়েছে।
ভবনটিতে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য ভবনটিতে সুপরিসর কক্ষ রয়েছে। দলের সভাপতির কক্ষের সঙ্গে রয়েছে বিশ্রামাগার ও নামাজের জায়গা। থাকছে ডিজিটাল লাইব্রেরি, ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিক লাউঞ্জ, ডরমিটরি ও ক্যান্টিন। দু’পাশ কাঁচ দিয়ে ঘেরা।

এছাড়াও দু’টি স্বতন্ত্র কার পার্কিং, একাধিক লিফট, সিঁড়ি, অগ্নি-প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে।

ভবনটির ছয় বা সাত তলা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অফিস থাকবে।