প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন । সরকার তাঁদের বিভিন্ন প্রকল্পে (রাজউক, সিডিএ, কেডিএ) প্লট বরাদ্দ দিচ্ছে। দেশে প্রবাসীদের বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট কিনতে সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)। এ জন্য ‘প্রবাসবন্ধু’ নামে একটি ঋণ কর্মসূচি চালু করেছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালি, ফ্রান্স, গ্রিস, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা এই ঋণ নিতে পারবেন।

জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক এবং প্রবাসীরা এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাঁদের দেশে নিষ্কণ্টক জমির মালিক হতে হবে। ফ্ল্যাট ঋণের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত রেজিস্টার্ড ডেভেলপার নির্মিত ফ্ল্যাট ক্রয়ে আগ্রহী হতে হবে। প্রবাসী নাগরিকদের ক্ষেত্রে বৈধভাবে বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানকাল ন্যূনতম তিন বছর হতে হবে।

বিএইচবিএফসির কর্মকর্তারা জানান, বাড়ি নির্মাণে একক ঋণ, গ্রুপ ঋণ এবং ফ্ল্যাট ঋণ—এই তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে বিএইচবিএফসি। বাড়ি নির্মাণের চেয়ে ফ্ল্যাট কেনায় সুদের হার একটু বেশি। আর ঋণ পরিশোধ করা যাবে ৫, ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছরের মেয়াদে মাসিক কিস্তিতে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বেশি হলে কিস্তির পরিমাণ কম হবে। ঋণের আবেদনপত্রের সঙ্গে বিদেশে চাকরির সনদ এবং রেসিডেন্ট পারমিটসহ সব কাগজ কনস্যুলেট বা দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। অবশ্য কেউ তা না চাইলে বিএইচবিএফসির নির্ধারিত এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমেও কাগজপত্রের সঠিকতা (ভেরিফাই) যাচাই করিয়ে নিতে পারে।

বাংলাদেশের যেকোনো তফসিলি ব্যাংকে ঋণের আবেদনকারীর সঞ্চয়ী হিসাব থাকতে হবে এবং ঋণে নির্মিত বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য বাংলাদেশে থাকেন এমন কাউকে আমমোক্তার নিয়োগ করতে হবে। প্রবাসী নাগরিকদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকতে হবে এবং প্রস্তাবিত জামানতি সম্পত্তি মর্টগেজ সম্পন্নের পর ঋণ আবেদন করতে হবে। ঋণে প্রস্তাবিত সম্পত্তি দায়মুক্ত হতে হবে। বন্ধকীতব্য সম্পত্তি সর্বদাই বিএইচবিএফসির প্রথম চার্জে দায়বদ্ধ হতে হবে।

এই ঋণে প্রবাসীদের আগ্রহ কেমন, জানতে চাইলে বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের প্রবাসীরা দেশে জমি কিনে রাখছেন। আমরা প্রবাসীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছি। ফলে অনেকেই আমাদের ঋণ নিচ্ছেন। আমরা প্রবাসীদের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ বছরে ঋণ পরিশোধের সুবিধা দিচ্ছি। সরকারি প্লটের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদে আমরা সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এতে স্বদেশে বিনিয়োগে উত্সাহিত হবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অন্যদিকে তাঁদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা ভালো পরিবেশে বসবাসের সুযোগ পাবেন।

তবে বাড়ি নির্মাণে যত টাকা ব্যয় হবে, তার ৭০ শতাংশ ঋণ দেবে বিএইচবিএফসি। বাকি ৩০ শতাংশ থাকতে হবে গ্রাহকের নিজস্ব বিনিয়োগ। ঋণের টাকাও পাওয়া যাবে কয়েকটি কিস্তিতে, একবারে নয়।