শীতকালে মাছের খাদ্যগ্রহণ কমে যায়, ফলে বৃদ্ধিও কম হয়। তাই শীতকালে মাছের প্রয়োজন অধিক পরিচর্যার। যাঁরা বাণিজ্যিক মাছের চাষ করেন, তাঁরা শীতকালে পুকুর শুকিয়ে পরের বছর মাছ চাষের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। শীতের সময়ে মাছের চলাফেরা সাধারণত কম । শীতকালে পুকুরের জলে রোদ অল্প সময় পড়ায় জলের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। রুই, কাতলা, মৃগেল প্রভৃতি কার্প জাতীয় মাছ সাধারণত ১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার নিচে খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়। এই সময় মাছের বৃদ্ধি প্রায় হয় না বললেই চলে।

এই সময় সাইপ্রিনাস কার্প, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, আমুর কার্প প্রভৃতি প্রজাতির মাছ চাষের উপযুক্ত সময়। এই সব প্রজাতির মাছ ৪-৫ ডিগ্রী তাপমাত্রাতেও খাদ্য গ্রহণ করে এবং এদের বৃদ্ধিও দ্রুত হয়। আর এই সকল মাছের ডিম পোনার মূল্যও কম এবং এদের মৃত্যুহারও কম। যদিও সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসেই চারা পোনা ছাড়ার উপযুক্ত সময়, তবে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেও এই মাছের চাষ করা যায়। ৬-৭ মাসের মধ্যে এই মাছ তুলে বাজারজাত করে রুই, কাতলা-সহ অনান্য মাছ চাষও করা যায়।

আবার শীতে তাপমাত্রা কম থাকায় পুকুরে অ্যামোনিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে পুকুরের উপরি ভাগের তাপমাত্রা তলদেশের চেয়ে বেশি থাকে। জলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয় এবং অনেক সময় মাছ মরতে শুরু করে। পুকুরে উদ্ভিদকণার প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় জলে দ্রবীভূত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে মাছের শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া ব্যাহত হয়। মাছের ক্রিয়া সঠিক রাখার জন্যে কৃত্রিম উপায়ে জলে অক্সিজেনের বৃদ্ধি ঘটাতে হবে। পাম্প মেশিন দিয়ে জলে ফোয়ারা সৃষ্টি করে, জাল টেনে অথবা সাঁতার কেটে জলে অক্সিজেনের সঞ্চার করতে হবে। এছাড়া জাল টানার ফলে পুকুর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাস বেরিয়ে যায়। এতে মাছ সুস্থ থাকে।

এই সময় মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যাওয়ায় দৈহিক বৃদ্ধি হ্রাস পায়। এছাড়া জলের পিএইচ (PH)-এরও তারতম্য দেখা যায়। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুকুরে যাতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পৌঁছয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এই সময় ভাসমান খাদ্য প্রয়োগ করলে মাছ খাদ্য গ্রহণ করে এবং অপুষ্টি ও ওজন হ্রাস থেকে রক্ষা পায়। এতে মাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।