জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ জানুয়ারি ৪, ২০২০ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 443 বার
আজ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী । বাংলা ও বাঙালীর স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যেই মূল দল আওয়ামী লীগের জন্মের এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের এ ছাত্র সংগঠনটি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বেই ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। তত্কালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবের প্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এক ঝাঁক মেধাবী তরুণের উদ্যোগে সেদিন যাত্রা শুরু করে ছাত্রলীগ। ৭২ বছরে ছাত্রলীগের ইতিহাস হচ্ছে জাতির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন, স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনা, গণতন্ত্র প্রগতির সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের ইতিহাস। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়েছে এবং চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।
১৯৪৯ সালে তত্কালীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল হিসাবে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে, যা পরে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে এ দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। এ প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বাঙালি জাতির ইতিহাসে বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ। বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, ’৫৪-র সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ পরিশ্রমে যুক্তফ্রন্টের বিজয় নিশ্চিত, ’৫৮-র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, ’৬৬-র ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া, ৬ দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, ’৬৯-র গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাক শাসকের পদত্যাগে বাধ্য করা এবং বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা, ’৭০-র নির্বাচনে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ, স্বাধীনতা-পরবর্তী সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অসামান্য অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অংশ নেয় ছাত্রলীগ। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) দেশে ফিরে স্বাধীনতার চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক ধারা পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের সূচনা করেন। ছাত্রলীগ ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনন্য ভূমিকা পালন করে।
সংগঠনটির এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঘিরে তিন দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ছাত্রলীগ। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব সাংগঠনিক কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৭টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটা হয়। একই দিন দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ পুর্ণমিলনীর আয়োজন করেছে। পুর্ণমিলনীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এ ছাড়া রোববার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাশে বটতলায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করা হবে। সোমবার সকাল ১০টায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতার সামনে দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
Leave a Reply