‘প্রাকৃতিক তন্তু উদ্ভিজ্জ ও টেকসই উন্নয়ন’ শিরোনামে পাটসহ প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহার বিষয়ক একটি নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের চলতি ৭৪তম সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় কমিটিতে বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার একথা জানানো হয়।

এর আগে বাংলাদেশ এবছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রস্তাবটি দ্বিতীয় কমিটিতে উত্থাপন করে। প্রায় ৩ মাসের টানা আলাপ-আলোচনা পক্ষে-বিপক্ষের মতামতসমূহকে বিবেচনায় নিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ সকল সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে এই প্রস্তাব গ্রহণের পক্ষে আনতে সক্ষম হয়।

ভারত, চীন, রাশিয়া, আয়ারল্যান্ড, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, মিশর, নাইজেরিয়াসহ ৬৮টি দেশ প্রস্তাবটিতে কো-স্পন্সর করে।

এটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রথম রেজুশেলন যেখানে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতগতভাবে টেকসই এবং সামাজিকভাবে লাভজনক কৃষি পণ্য পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুর চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবতা তুলে ধরা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনে প্রাথমিকভাবে রেজুলেশনটিতে পাট এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তু যেমন অ্যাবাকা, কয়ার, কেনাফ, সিসাল, হেম্প ও রামি এর ব্যবহার ও উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে, যা এতদিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রায় অজানাই ছিল।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন রেজুলেশনটি গ্রহণের সময় বক্তব্যে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিখাতে আমূল পরিবর্তন আনতে সাহসী ও বাস্তবভিত্তিক নীতি-কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।’

তিনি বলেন, সরকার গ্রামীণ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়িত এবং ক্ষুদ্র কৃষিজীবী ও উদ্যোক্তাদেরকে সুরক্ষিত করেছে। আর এই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই প্রাকৃতিক তন্তুসমূহ বিশেষ করে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্যসমূহের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উপকারিতা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরে জাতিসংঘে রেজুলেশনটি উত্থাপন ও গ্রহণের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিল বাংলাদেশ।

রেজুলেশনটি গ্রহণের ফলে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, উন্নয়ন ও সহযোগিতার পথ সুগম হবে এবং এর প্রচলিত ব্যবহারের বাইরে সৃজনশীল ও মূল্য সংযোজিত ব্যবহারের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।

তিনি সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গ্রহণ করায় সকল সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে ধন্যবাদ জানান।

প্রস্তাব গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ কীভাবে উপকৃত হবে তা জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে উপস্থিত স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে সংক্ষেপে তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবটি পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুজাত পণ্যের জন্য একটি শক্তিশালী, কার্যকর ও সুনিপুন ‘গ্লোবাল ভ্যালু চেইন’ এর পথ পাকা করল। এর ফলে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৈশ্বিক বাজারে বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের পাটচাষী ও পাট ব্যবসায়ীগণের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।’

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহারের বিষয়টি তুলে ধরা। সকল দেশকে এক্ষেত্রে একীভূত করতে অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুগুলোকেও আমরা নিয়ে এসেছি। প্রথমবারের মতো এ ধরনের রেজুলেশন পাস করাতে এই আন্তর্জাতিক সমর্থন আমাদের প্রয়োজন ছিল।’

স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, এই রেজুলেশন প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের সুবিধা আর কৃত্রিম তন্তু যেমন- প্লাস্টিক ব্যবহারের অসুবিধা তুলে ধরার মাধ্যমে পরিবেশগত বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকা রাখবে। এতে সদস্য দেশসমূহকে পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বিষয়ে নতুন নতুন আইন, নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।

দ্বিতীয় কমিটিতে গৃহীত এই রেজুলেশন আগামী ডিসেম্বর মাসে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে উপস্থাপিত হবে। এখন থেকে দ্বি-বার্ষিকভাবে এ প্রস্তাব জাতিসংঘে আলোচিত হবে।খবর বাসসের