জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে চলমান আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় তিনজন হিন্দু ও দুই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকেও পিটিয়ে আহত করে তারা।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় মারিয়াম রশিদ ছন্দা নামের এক ছাত্রী গুরুতর আহত হন। হামলার পর ছাত্রলীগের পক্ষ নিয়ে ভিসি ফারজানা ইসলাম আন্দোলনরতদের ‘জামায়াত শিবির ও বিএনপি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

‘শিবির’ বলে মারধরের শিকার তিন হিন্দু শিক্ষার্থী হলেন- প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সুদীপ্ত দে, একই ব্যাচের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অমর্ত্য রায় ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শৌমিক বাগচী।

হামলার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের তিনজনকে ‘শিবির’ বলে মারধর করেছেন বলে জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগীরা।

হামলায় আহত এই তিনজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং চলমান উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য। এদের মধ্যে সুদীপ্ত দে শাখা ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক এবং শৌমিক বাগচী জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক। আর অর্মত্য রায় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের নবীন ও ইংরেজি বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের অনিন্দ্য নামে দুজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকেও ‘শিবির’ বলে হামলা করে আহত করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

হামলার বর্ণনা দিয়ে সুদীপ্ত দে বলেন, আমাকেও ‘শিবির’ বলে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রফ্রন্টের জাবি শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে ‘শিবির-শিবির’ বলে আমাকেও মারধর শুরু করে তারা। আমাদের শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক আন্দোলনকে বন্ধ করার অপচেষ্টা হিসেবে উপাচার্যের মদদে এই হামলা করেছে ছাত্রলীগ।

হামলায় আহত অমর্ত্য রায় বলেন, ‘ও শিবির, ওরে মার’ এই কথা বলেই আমার ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। তাদের একজন আমার শার্টের কলার ধরেছিল, তখনই আরেকজন আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। তখন আমি একজন শিক্ষকের গায়ের ওপর গিয়ে পড়ি। একই ভাবে শৌমিক বাগচীকেও ‘শিবির’ বলে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, আমাদের আন্দোলনকে বন্ধ করতে প্রশাসনের নির্দেশে ‘শিবির’ মারার নামে আমাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অথচ ক্যাম্পাসে আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে শিবির নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এখানে কোনো শিবির নেই।

আন্দোলনের সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, যৌক্তিক এই আন্দোলন দমাতে প্রশাসন ও ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদেরকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করছেন। এখানে শিবিরের কেউ নেই।

দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ছাত্রলীগের হামলায় পাঁচ নারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩৫ আহত হন। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার ও এনাম মেডিকেলে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়।

এরই মধ্যে মারিয়াম রশিদ ছন্দার ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রলীগের এক কর্মী ছন্দার পেটে লাথি মারেন। এতে যন্ত্রণায় মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। হামলার শিকার মারিয়াম মাটিতে শুয়ে কিছুক্ষণ কাতরান। এ সময় তাকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যান তার সহপাঠীরা।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুরনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে তারা সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন ।

আন্দোলনের মুখে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখানে এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যরা। এ অবস্থায় যেকোনো সময় পুলিশি হামলার আশঙ্কা করছেন আন্দোলনকারীরা।