ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব। ওয়ার্ড কাউন্সিলর হলেও ঢাকা-১৩ আসন (মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলানগর) এলাকায় ছিলো তার রাজত্ব। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুবলীগের রাজনীতি যুক্ত হন। তারপর মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা পাইনকে জুতাপিটা করার অভিযোগে বহিঙ্কৃত হন তিনি।

পরে ২০১৫ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন রাজীব।এরপর আর পেছনে তাকে হয়নি তাকে। রাতারাতি আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান তিনি। শুরু হয় জমি, ফ্ল্যাট দলখ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও টেন্ডারবাজি। সাবেক এক সংসদ সদ্যসের পুত্র পরিচয়ে সর্বত্র চলে তার দখলবাজি ও চাঁদাবাজি। দেশ বিদেশে রয়েছে তার অঢেল সম্পদ।

এদিকে ভাটারা থানার অস্ত্র ও মাদক মামলার তদন্তভার সোমবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাজীবের কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।গত ২৬ আগস্ট ব্র্যাক ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টেই তিনি জমা দিয়েছেন ৫ কোটি টাকা।৩টি চেকে ওই টাকা জমা দেয়া হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, অস্ত্র ও মাদক মামলায় ৭ দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ড নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে রাজীব নিজেই তার অবৈধ লেনদেন, দখলদারিত্ব এবং অপরাধ জগতের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিয়েছেন। সাবেক এক এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম করতো সে। গ্রেপ্তার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানের সহযোগী ছিলো রাজীব। মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদে তার নাম বেরিয়ে আসে। আরো একজন কাউন্সিলর নজরদারীতে রয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এলাকাবাসী জানান, রাজীবের গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলায়। দেশ স্বাধীনের পর পরই রাজীবের বাবা তোতা মিয়া হাওলাদার ও চাচা ইয়াছিন হাওলাদার ঢাকায় চলে আসেন। এরপর তারা মোহাম্মদপুর এলাকায় রিকশা চালাতেন। তারপর রড মিস্ত্রীর কাজ করতো। এখন তারা সবাই কোটিপতি। রাজীবের মোহাম্মদপুরসহ আশেপাশের এলাকায় ২০টি বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে। জমি ও ফ্ল্যাট দখলই ছিলো তার নেশা।চলতে কোটি টাকার গাড়িতে। সামনে পেছনে থাকতো গাড়ি বহর।তার চাচা ইয়াছিনেরও রয়েছে ১০/১৫টি বাড়ি ও ফ্ল্যাট। চাচা-ভাতিজার দখল বাণিজ্যে নি:স্ব হয়েছে অনেকে। তাদের ভয়ে তটস্থ এলাকাবাসী। রাজীবের সহযোগীদের ভয়ে অনেকে এলাকা ছেড়েছেন। কাউন্সিলর মিজান, রাজীব ও তুহিন একই সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করতো।

রাজীবের এক আত্মীয় বলেন, তার হঠাৎ করে উত্থান অবিশ্বাস্য। কাউন্সিলর হওয়ার পর বাসায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না। সে তার অতিথ ভূলে গেছে।

স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, রাজীবকে আগে কেউ চিনতনা। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের সময় তাকে মোহাম্মদপুর এলাকার সাবেক এক এমপির বাসায় কাজ করতে দেখা যেত। সেখান থেকেই তার উত্থান। গত ৬ মাস আগে যুবলীগ চেয়ারম্যানকে এক কোটি টাকার বিনিময়ে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। উৎস -আমাদের সময়