ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত ফেনী নদীর পানিচুক্তি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন।

রিটে ফেনী নদী থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পানি সরবরাহ ও পাম্প বসানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে এই রিট মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চুক্তিটি স্থগিত রাখার আবেদনও করা হয়েছে।

রিটকারি আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, এ রিটের ওপর আগামী সপ্তাহে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।

রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

আইনজীবী মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে, চুক্তির আগেই অবৈধভাবে ২০১০ সাল থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে অন্তত ৩৪টি স্থানে পানির পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কিউসেক পানি তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আবার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের খাবার পানি সরবরাহের জন্য ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি দিতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ।

রিটে বলা হয়েছে, নদীর পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে পানির পাম্প ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনার ওপর বাংলাদেশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যক। অন্যথায় চুক্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভারত যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে বেশি পরিমাণে পানি নেয়, সেক্ষেত্রে ফেনী নদীর মারাত্মক ঝুঁকিসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে, যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (এ) এর লঙ্ঘন হবে।

রিটে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে যে কোনও রাষ্ট্রের কোনও চুক্তি যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের পূর্ণ ক্ষমতা আছে ওই চুক্তির ওপর হস্তক্ষেপ করার। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে ছিটমহল বিনিময়সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮২ সালে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের কারণে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত ছিটমহল চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এই মামলাতেই শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ভারত সরকারকে ছিটমহল বিনিময়ে অনুমোদন দেয় এবং এর মাধ্যমে তারা একটি নজির সৃষ্টি করে যে যেকোনও বৈদেশিক চুক্তি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে সেখানে হস্তক্ষেপ করার জন্য হাহকোর্টের পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। তাই বাংলাদেশের হাইকোর্টও এ ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ পাবে।