জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ অক্টোবর ৪, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 458 বার
ফেনীর আলোচিত সাবেক এমপি জয়নাল হাজারী বলেছেন: যে চক্রটি গত ২০ বছর থেকে প্রচার করে আসছে আওয়ামী লীগ থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তারাই আজ বলছে আমাকে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য করা হয়নি।
তিনি আরও বলেছেন: সব বিষয় ওবায়দুল কাদেরের জানার প্রয়োজন নেই।
উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য করা হয়নি এমন প্রচারকে বিভ্রান্তমূলক বলে উল্লেখ করেছেন ফেনীর আলোচিত নেতা জয়নাল হাজারী। তিনি বলেন, আমাকে উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করা হয়নি, এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারে কেউ বিশ্বাস করবেন না। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করতে চাই- আমাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করা হয়েছে। শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি) কাল (বুধবার) রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে তাতে দস্তখত করে আওয়ামী লীগ অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এসময় বাহাউদ্দিন নাছিমসহ তিন জন সাংগঠনিক সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। সুতরাং অবশ্যই আমি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। এ ব্যাপারে কোনও বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই।
জয়নাল হাজারীকে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য করা নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সচিবালয়ে দেওয়া একটি বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে হাজারী এসব কথা বলেন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জয়নাল হাজারী বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকাল পৌনে ৫টায় ফেসবুক লাইভে আসেন এবং প্রায় আধঘণ্টার মতো কথা বলেন।
এর আগে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, জয়নাল হাজারীকে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য করার বিষয়টি তার জানা নেই।
ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে হাজারী বলেন, রাজনীতি করতে হলে নাকি কিছু মিথ্যা কথা বলতে হয়। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের কোনও মিথ্যা কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, আমি কিছু জানি না। বলেছেন, আমার (ওবায়দুল কাদের) সঙ্গে আলোচনা হয়নি। এটা ঠিক এবং শতভাগ সত্য যে এটা নিয়ে নেত্রী কারও সঙ্গে আলোচনা করেননি। কারণ, কাউকে উপদেষ্টা পরিষদে রাখা, উপদেষ্টা করা এটা একান্তভাবে তার নিজস্ব এখতিয়ার। গত সম্মেলনে নেত্রীকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এটা অনেকটা নিয়োগ- কোনও ভোট বা কাউন্সিলের মাধ্যমে হওয়ার বিষয় নয়। আমার আগেও যাদের উপদেষ্টা কমিটিতে এনেছেন তাদের ক্ষেত্রেও এভাবে হয়েছে। কারও সঙ্গে আলোচনা করে তা করেননি। শুধু এটার চিঠি আওয়ামী লীগ অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং সেখান থেকে তা গণমাধ্যমে চলে যায়।
লাইভে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমাকে জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করেছেন। এটা গতকাল (বুধবার) সব জায়গায় ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে আজকে আবার বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা হচ্ছে। সে কারণেই কিছুটা হলেও বিভ্রান্তি দূর করতে আমার এই লাইভে আসা।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বোধ হয় খবর নিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করতে পারতেন। তিনি খবর নিলে এটা জানতে পারবেন।
সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে তার উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিভ্রান্তির কারণ হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ধন্যবাদ জানাই আমাদের সাধারণ সম্পাদককে, তিনি মিথ্যা বলেননি। ঠিকই তো আছে যে এটা নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলাপ করার কোনও দরকার নেই। উনার এটা জানারও কোনও দরকার নেই। আমাকে নেত্রী যে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন এটা তো উনিও জানতেন না। আমি উনার বাসায় গিয়ে এটা জানিয়ে এসেছি।
উপদেষ্টা করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন আমাকে ফোন করে জানালেন নেত্রীর দস্তখত হয়ে গেছে। আমি নিজে এটা প্রচার করতে চাইনি। কিন্তু তারপরই দেখি বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশনে খবরটা চলে এসেছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, -আমি সিঙ্গাপুর অসুস্থ অবস্থায় থেকে এসব মিডিয়াকে কী নিয়ন্ত্রণ করতে পারি? সেই ক্ষমতা কী আমার আছে? আজকে মিডিয়াতেও আমাকে উপদেষ্টা করার খবর প্রচার করেছে।
উপদেষ্টা করার বিষয়টি ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনার বিষয় নয়, তাকে এটা জানতে হবে এটাও কোনও বিষয় নয়। এমন কী ওয়ার্কিং কমিটি বা প্রেসিডিয়াম কারও সঙ্গেই এই বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নেই, দরকার নেই। আর সব সময় দেখা গেছে আমার বিষয়ে নেত্রী এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আর যেটা নেত্রীর এখতিয়ার তা অন্য কারও জানার বিষয় নয়।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য অনুদান গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক এমপি হাজারী বলেন, যেদিন আমি নেত্রীর হাত থেকে ৪০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছিলাম, সেদিনই নেত্রীকে বলেছিলাম- ‘আপনি বলছেন, আমাকে কখনও বহিষ্কার করেননি, দলও করেনি, আপনিও করেননি। তখন আমি বলেছিলাম তাহলে দলে আমার অবস্থান কোথায়? তখন তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, অবস্থান ঠিক হয়ে যাবে। আমার আরও দুই একটি বিষয়ও তিনি মেনে নিয়েছিলেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেছেন।
একটি পক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে অভিযোগ তুলে হাজারী বলেন, যারা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বলে আসছে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে সেই পক্ষই আজকে আবার বলছে আমাকে উপদেষ্টা করা হয়নি। এখানে লোকগুলো দেখবেন, সেই অপশক্তিটাকে দেখবেন। এরা ওরা যারা ২০ বছর ধরে আমাকে দল থেকে ষড়যন্ত্র করে বের করে রেখেছিল। কিন্তু আমাকে বহিষ্কার করা হয়নি। নেত্রী ২৫/৩০ জন ব্যক্তি ও ৩/৪ জন মন্ত্রীর সামনেই বলেছেন আমাকে বহিষ্কার করা হয়নি। যেখানে নেত্রী বলছেন আমাকে কখনও দল থেকে বহিষ্কার কর হয়নি সেখানে আজকেও কিছু কুচক্রী বলছে আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি।
হাজারীকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন নাসিম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার নিয়োগের পর সবার আগে সম্ভবত আলিউদ্দিন নাসিম স্ট্যাটাস দিয়ে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাহলে তিনি কি কোনও খবর না নিয়ে এই ধন্যবাদ জানিয়েছেন? সেও তো বুঝতেছে- মিডিয়া নিশ্চিত না হয়ে এই খবর প্রচার করেনি। আজ আবার নাসিম স্ট্যাটাস দিয়ে বলছেন এটা নেত্রীর একান্ত নিজস্ব এখতিয়ার। এ কথাটি বলার জন্য আলাউদ্দিন নাসিমকেও ওবায়দুল কাদেরের মতো সমভাবে ধন্যবাদ জানাবো। কেননা এ কথা বলে নাসিম বুঝাতে চেয়েছেন এটা ওবায়দুল কাদেরের এখতিয়ার নয়, নেত্রীর এখতিয়ার। নেত্রী যত কিছু করেন তার সব কিছু ওবায়দুল কাদেরকে জানতে হবে না। বিষয়টি তা নয়।
তিনি বলেন, পরিষ্কার ঘোষণা করছি, আমাকে অবশ্যই উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য করা হয়েছে। যে কমিটির সদস্য আমির হোসেন আমু আর তোফায়েল আহমেদের মতো নেতা এই কমিটির সদস্য। এই ফোরামে আমাকে নিয়ে শেখ হাসিনা আমার প্রতি যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। এত বিরোধিতা, এত চক্রান্ত, এত মিডিয়ার আক্রমণের পরও তিনি আমার প্রতি এ রকম আন্তরিকতা রাখেন।
তিনি ফেনীসহ দেশবাসীকে উদ্দেশ করে বলেন, আমি বলবো মিথ্যায় বিভ্রান্ত হবেন না। ওরা এটাকে নিয়ে কেন বিভ্রান্তি ছড়াতে চাচ্ছে তার কারণ আছে। তারা মনে করছেন এটার পরপরই আমি ফেনীতে যাবো। আর আমি ফেনী গেলেই ওদের অস্তিত্ব বিলীন হবে। কিন্তু এই ধারণা কতটা সত্য তা জানি না। আমি বলতে চাই উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হলেও আমি নেত্রীর নির্দেশ ছাড়া ফেনী যাবো না। যদি নেত্রী বলেন যেতে বা তার কোনও প্রয়োজন তাহলে তো যাবোই। মরে গেলেও কেউ আমাকে তখন রুখতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমি ইতোপূর্বে যত লাইভ ভাষণ দিয়েছি, বিবৃতি দিয়েছি সেখানে কখনও কোনও মিথ্যাচার ছিল না। আমি মিথ্যা বলি না। এটা নিয়েও মিথ্যা বলছি না।
আলাউদ্দিন নাসিমকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নাসিমকে অনুরোধ করবো তুমি বিষয়টি খোঁজ নেও। তুমি প্রটোকল অফিসার ছিলে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কোন খবর কীভাবে যায় তা তোমার পক্ষে এসব খবর নেওয়া যতটা সহজ, ওবায়দুল কাদেরের পক্ষে ততটা সহজ নয়। এক সময়কার প্রবল প্রতাপশালী আলাউদ্দিন নাসিমের অবস্থাও ভালো না। এর পেছনে কারা রয়েছে নাসিম, তুমি তা জানো। তোমার যারা সর্বনাশ করেছে। নমিনেশন পেতে দেয়নি, আমার যারা সর্বনাশ করেছে- তারা একই পক্ষ।
Leave a Reply