জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 406 বার
ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার দুঃসাহসিক অভিযানে স্লোভাকিয়ার জঙ্গল থেকে নিখোঁজ বাংলাদেশী যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।বাংলাদেশী ওই যুবকের নাম ফরিদ উদ্দিন আহমদ (৩৫)। তিনি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামের সমশাদ আলীর পুত্র।গত ৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার স্টারিনা জঙ্গল (দুর্গম পাহাড়ি এলাকা) থেকে উদ্ধার করে সে দেশের পুলিশ। তিনি গত ২ সেপ্টেম্বর দালাল ও ৫ সঙ্গীর সঙ্গে ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাচ্ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদ উদ্দিন আহমদের নিকটাত্মীয় (ফুফাতো ভাই) যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবু বক্কর সাংবাদকিদরে জানান, গত ৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার জওজে টিভির বরাত দিয়ে সে দেশের ‘নোভনেী ডট এসক’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদটি প্রচার করে।
প্রকাশতি ওই সংবাদে উল্লেখ করা হয় ‘আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী ইউরোপিয়ান নাগরিক নন এমন একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে স্লোভাকিয়ার স্টারিনা জঙ্গলে একজন পর্যটক দখেতে পান। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি উদ্ধারকারী দল ও পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করনে। এরপর পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল লাশ উদ্ধার করে। ওই সংবাদটি নিখোঁজ ফরিদ উদ্দিনের বৃটেনে থাকা স্বজনরা দেখতে পান।
তখন স্লোভাকিয়ার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোবাইলে তারা যোগাযোগ করেন এবং ই-মেইলে ফরিদের তথ্য পুলিশকে প্রদান করেন। উদ্ধারকৃত মরদেহ নিখোঁজ ফরিদের বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয় এবং স্লোভাকিয়ায় গিয়ে লাশ শনাক্তের জন্য ফরিদের স্বজনদের বলে পুলিশ।
পরে ফরিদের চাচা আলকাছ আলী (আওলাদ) বৃটিশ সরকারের অনুমতি নিয়ে বৃহস্পতিবার দুজন বৃটিশ নাগরিককে সঙ্গে করে যুক্তরাজ্য থেকে স্লোভাকিয়ায় যান। তারা সেখানে পৌঁছে কৌচি শহরের একটি মর্গে গিয়ে ফরিদ উদ্দিন আহমদের লাশ শনাক্ত করেন।
লাশ বাংলাদেশে আনার জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানান আবু বক্কর। তবে কিভাবে ফরিদ আহমদের মৃত্যু হয়েছে এর সঠিক কারণ জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে নিহত ফরিদ উদ্দিন আহমদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা আহাজারী করছেন। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে পরিবেশ।
৬ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবার বড় ফরিদ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী সেলিনা সুলতানা উপজেলার রামধানা সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন। ফরিদ-সেলিনা দম্পতির ইরা তাসফিয়া নামের ৩ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
ফরিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে রাশিয়ায় যান। খেলা শেষে তিরি রাশিয়া থেকে ইউক্রেন যান। সেখানে কয়েক মাস অবস্থান করেন। সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার জন্য রাশিয়ার অবস্থানরত দাদা নামে পরিচিত দালাল লটিন বড়ুয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন ফরিদ।
দালাল লটিন বড়ুয়ার বাড়ি চট্রগ্রাম জেলায়। চুক্তি অনুযায়ী দালাল লটিন বড়ুয়ার এজেন্ট বাংলাদেশে থাকা সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কামাল নামের এক দালালের কাছে ৭ লাখ টাকা জমা রাখেন ফরিদ পরিবার। চুক্তি অনুযায়ী কথা ছিল মাত্র ২ঘন্টা পায়ে হেটে এবং বাকি রাস্তা বৈধ্যভাবে গাড়িতে করে ফরিদকে ফ্রান্স পৌছানোর পর জমা করা ৭ লাখ টাকা হস্তান্তর করা হবে দালালের কাছ।
চুক্তি সম্পাদনের পর ইউক্রেনস্থ দালাল শিবিরে প্রায় ১ মাস অবস্থান করেন ফরিদ। গত ২৭ আগস্ট পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন ফরিদ। এ সময় তিনি জানান, ২৮ আগস্ট ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে সঙ্গীদের সঙ্গে যাত্রা করবেন। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি ফরিদের।
২ সেপ্টেম্বর ফরিদের ফ্রান্স যাত্রাপথের এক সঙ্গী ফোন করে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তার (ফরিদ) ভাই কাওছার আলীকে জানান একজন দালালের সঙ্গে ফরিদ উদ্দিনসহ তারা ৬ জন ইউক্রেন থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। পায়ে হেঁটে ফ্রান্স পৌছতে তাদের ৫ দিন সময় লাগবে।
ফরিদদের সঙ্গে খাবার তেমন ছিলো না।সঙ্গে থাকা খেঁজুর খেয়ে আরও একদিন কাটান। দুইদিন পায়ে হেঁটে তারা স্লোভাকিয়ার একটি জঙ্গলে পৌঁছেন। সেখানে ফরিদের খেঁজুর শেষ হয়ে গেলে শুকরের মাংস বাধ্য হয়ে খান তিনি। এই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে হয়ে পড়েন তিনি। নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হয় এবং বমি আর ডায়রিয়া হতে থাকলে একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েন ফরিদ। জঙ্গলে সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে একটি বিকট শব্দ শুনে সবার ঘুম ভেঙ্গে যায়।
এ সময় ঘুম থেকে উঠে ফরিদকে তাদের সঙ্গে দেখতে না পেয়ে রাতের অন্ধকারেই খুঁজতে শুরু করেন তারা। কোথাও ফরিদকে খুঁজে না পেয়ে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাকে ছাড়াই ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। দালাল ও ফরিদের সঙ্গী অন্য ৫ জন ২ সেপ্টেম্বর ফ্রান্স পৌঁছেন। তাদের মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার নাজরি, হবগিঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার সোহাগ এবং দলিদার ও বুরহান নামের আরও দুজন ছিলেন।
ফরিদ উদ্দিন আহমদের ভাই আলাউদ্দিন ও গিয়াসউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন ‘আমরা ধারণা করছি আমার ভাইকে স্লোভাকিয়ার ওই জঙ্গলে হত্যা করে সেখানেই ফেলে রেখে দালাল ও তার সঙ্গীরা ফ্রান্সে চলে যায়। নিখোঁজের পর থেকে তারা (দালাল ও ফ্রান্স যাত্রাপথের ফরিদের সঙ্গীরা) আমাদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ফরিদ এখনও জীবিত রয়েছেন বলে আশ্বাস দিয়ে আসছে।’
তারা বলেন, দালালরা আমাদের ভাইয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে ও হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
Leave a Reply