যশোরের শার্শার লক্ষণপুরে গৃহবধূ গণধর্ষণ মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পুলিশ হেড কোয়াটারের আদেশে মামলাটি যশোর পিবিআই গ্রহণ করেছে। এই মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করা হলেও একজন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ওই অজ্ঞাত আসামি এসআই খায়রুল নাকি অন্য কেউ সেটি নিয়ে চলছে তোলপাড়।

পুলিশের দাবি, ভিকটিমের সামনে হাজির করা হলে তিনি চিনতে পারেননি। এজন্য একজনকে অজ্ঞাত আসামি রেখেই মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। আর ভিকটিমের দাবি, এসআই খায়রুলকে চিনতে পারলেও ভয়ে তার নাম বলতে পারেননি।

পিবিআই যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে। সেগুলো সম্পন্ন করেই তদন্ত শুরু হবে। অচিরেই প্রকৃত আসামি শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, হতে পারে সেদিন ভিকটিম ভয়ে এসআই খায়রুলের নাম বলেননি। তদন্তে খায়রুলের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ব্যক্তির দায় সংস্থা বহন করবে না।

তিনি আরও বলেন, ভিকটিমের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিকটিমের পরিবার জানিয়েছেন, ভয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে স্থানীয় গোড়পারা ফাঁড়ির এস্আই খায়রুলের নাম প্রকাশ করতে পারেনি। ওই গৃহবধূ বলেন, ‘আমি খায়রুলকে ভালোভাবেই চিনি। আমাদের কাছ থেকে দফায় দফায় ৮ ও ৪ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। আবার বিনা কারণে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে।’

ধর্ষণের সময় এশাই খায়রুল উপস্থিত ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রিপোর্টে তো প্রমাণ আসবে। আর আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তারা বলবে। কারণ তারা আরও ভালো জানে।’ এসআই খায়রুলসহ আরও যে তিন আসামি রয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে ওই গৃহবধূ বলেন, ‘তাদের এমন শাস্তি দেওয়া হোক যা দেখে আর কেউ এমন অপকর্ম করতে সাহস না করে।’

এদিকে, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী ও ফোরামের জেলা নেতারা ওই নারীর বাড়িতে যান। তারা ওই গৃহবধূর খোঁজখবর নেন এবং আইনগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

নিপুণ রায় বলেন, এসআই খায়রুলসহ চারজনের নাম এসেছে। ভয়ভীতি দেখিয়ে এসআইকে মামলায় এজাহারভুক্ত করা হয়নি। বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে এসআই খায়রুলকে এক নম্বর আসামি করে তাকে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানিয়েছিলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তবে, সেখানে কার কার সিমেন (বীর্য) রয়েছে তা জানতে ডিএনএ টেস্ট প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর এলাকায় ওই গৃহবধূর বাড়িতে এসআই খায়রুল, সোর্স কামরুলসহ চারজন যান। তারা ৫০ হাজার টাকা দাবি করে না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই খায়রুল ও কামরুল তাকে ধর্ষণ করেন বলে ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন।

৩ সেপ্টেম্বর সকালে ওই গৃহবধূ যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে এলে বিষয়টি চাউর হয়। ওই দিন রাতেই শার্শা থানায় একটি মামলা করেন ভিকটিম। মামলায় এসআই খায়রুলের নাম রাখা হয়নি। আসামি করা হয় কামরুজ্জামান ওরফে কামরুল, লক্ষণপুর এলাকার আবদুল লতিফ এবং আবদুল কাদের এবং একজন অজ্ঞাত।এ ঘটনা তদন্তে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শার্শা থানার ওসি (তদন্ত) আল ফরিদ। বৃহস্পতিবার পুলিশ হেড কোয়াটারের আদেশে মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে।সূত্র-ইত্তেফাক