নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের পাশাপাশি সমাবেশ করাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ইটপাটকেলে পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ উভয় গ্রুপের প্রায় ২২ জন আহত হন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) রুহুল আমিনের নেতৃত্বে জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ১৩ রাউন্ড টিয়ালশেল ও ১৩ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীসহ অনেকেই জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টুকে দায়ী করছেন।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন নীলফামারী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান বিএ, জলঢাকা থানা পুলিশের এসআই মামুনুর রশীদ, কনস্টবেল মেহেদী হাসান, রুবেল হোসেন, নাছির উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, পথচারী শাহিনুর রহমান (৪২), দুলাল হোসেন, সাংবাদিক সেফাউল ইসলামসহ ২২ জন।

আহত উপ-পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। অন্যদের স্থানীয় হাসপাতালে ও বিভিন্ন কিনিকে চিকিৎসা চলছে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে দুটি গ্রুপ পৃথকভাবে ১৫ আগস্ট পালন করে আসছে। জাতীয় শোক দিবসে বেলা সাড়ে ১১টায় সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ পৃথকভাবে শোক র্যালি শেষে উপজেলার জিরো পয়েন্টে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পণ শেষে সেখানে সমাবেশ করছিলেন।

সেখানে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নলনি বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল গনি স্বপন, আওয়ামী লীগ নেতা একে আজাদ, জলঢাকা পৌরসভার সাবেক মেয়র ইলিয়াস হোসেন বাবলুর বক্তব্য শেষে বক্তব্য রাখছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান বিএ। মঞ্চে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা। এমন সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টুর নেতৃত্বে শোক র্যালি ওই সমাবেশ স্থলে এসে বক্তব্যরত আব্দুল মান্নানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে কিলঘুষি মারতে থাকে। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলীর হাতে লাঞ্ছিত হন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা।

এ সময় হামলাকারীরা সমাবেশের চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করতে থাকে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ হতে থাকে। এ সময় ৫ পুলিশসহ উভয় গ্রুপের ও পথচারীরা আহত হয়। পরে জেলা শহর থেকে পুলিশ গিয়ে রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু চত্বরে জাতির জনকের জীবন কাহিনি নিয়ে আলোচনা করছিলেন দলের সাবেক উপজেলা সভাপতি আব্দুল মান্নান বিএ। এ সময় বর্তমান উপজেলা সভাপতি আনসার আলীর মিন্টুর নেতৃত্বে জামায়াত শিবিরসহ লাঠি সোডা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালানো হয় আমাদের ওপর। তাদের হামলায় পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। আমরা এ ঘটনায় মামলা দায়ের করবো।

তবে পাল্টা অভিযোগ করে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আনসার আলী মিন্টু বলেন, আগে থেকে নির্ধারিত দলীয় কর্মসূচির আলোকে শোক র‌্যালি নিয়ে যখন আমরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাই ঠিক সেই মুহূর্তে সাবেক এমপি মোস্তফা, সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে আমাদের ওপর অতর্তিক হামলা চালানো হয়।

তিনি বলেন, তারা জামায়াত শিবিরকে সাথে নিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ চালায়। আমি এ ঘটনায় মামলা দায়ের করবো।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন (নীলফামারী সার্কেল) বলেন, দুপরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের কারণে আমাদের ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা ১৩ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ১৩ রাউন্ড রাবার বুলেট নিপে করি। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।