বরগুনার প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে মিন্নি তার শ্বশুরের অভিযোগকে মিথ্যা, মনগড়া ও বানোয়াট বলেন।
সংবাদ সম্মেলন ডেকে মিন্নি বলেন, আমার শ্বশুড় অসুস্থ্, ছেলের শোকে বিধ্বস্ত। আর এ সুযোগে প্রভাবশালীরা তাকে চাপ প্রয়োগ করে নিজেরা বিচারের আওতামুক্ত থাকতে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন। নিজেকে নির্দোষ উল্লেখ করে মিন্নি বলেন, ঘটনার দিন সকাল ১০ টার দিকে রিফাত কলেজে ঢুকে তাকে বলেছিলো, তার বাবা দুলাল শরীফ এসেছেন। কলেজ গেটে এসে শ্বশুরকে না দেখে আবার কলেজে ঢুকতে চেয়েছিলেন মিন্নি। তখনই রিশান ফরাজীসহ আরো অনেকেই তার স্বামী রিফাত শরীফকে ঝাপটে ধরে কলেজের বাইরে রাস্তায় নিয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিল-ঘুষি, পরবর্তীতে কোপানো শুরু করে।
এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, যারা ‘বন্ড ০০৭’ নামে সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি করেছে তারা খুবই ক্ষমতাবান ও বিত্তশালী। নেপথ্যের এই ক্ষমতাবানেরা বিচারের আওতা থেকে দূরে থাকা ও এই হত্যা মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য শ্বশুরকে চাপ দিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন।

মিন্নি বলেন, নয়ন বন্ড আমার ছোট ভাই ও বাবাকে হত্যার হুমকি দিত। এ জন্য তার বিরুদ্ধে কখনো মুখ খোলার সাহস পাইনি।

তিনি বলেন, আমার শ্বশুর অসুস্থ। ছেলেকে হারিয়ে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমার স্বামীকে হত্যার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে নিয়ে নেতিবাচক, কুরুচিপূর্ণ নানা পোস্ট এবং এডিট করা ছবি আপলোড করে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু করে। এর মূল উদ্দেশ্য এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা।

মিন্নি ঘটনার দিন নিজের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, আমি রিফাতকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেছি।

রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোর রাতে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত তিন জনসহ সাত আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে ছয় জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। সন্ত্রাসীরা রিফাতকে কুপিয়ে বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। তারা চেহারা লুকানোরও কোনও চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পরের দিন স্থানীয় সাংসদরে ছেলে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিন্নিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এ নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রতিবেদন ও নানাভাবে সমালোচনা শুরু হলে এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ পিছ পা হন। কিছুদিন চুপ করে থাকলেও এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ থেমে থাকেননি। বরগুনায় নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা ছিদ্দিকা মিন্নির পিছুও ছাড়েননি। মিন্নির দুর্নাম রটাতে এখন রীতিমত মাঠে নেমেছেন এই সুনাম।