জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে গণহত্যাযজ্ঞ ও গুমের ঘটনা উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন এবং শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীকে যাঁরা ব্যবহার করে সশস্ত্র বাহিনীর গায়ে কলঙ্ক লেপন করেছিলেন, সেই সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্যই এই তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত। ১৯৭৭ সালের লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ দেশবাসীর জানা উচিত। তাই শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন, তদন্ত কমিশন গঠন করুন। দেশবাসী জানুক জেনারেল জিয়ার আমলে কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।’

গতকাল মঙ্গলবার রাতে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে এ দাবি জানান তিনি।
এ সময় তিনি নিজের কারাবাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ কেন? পৃথিবীতে এমন হত্যাকাণ্ড হয়নি। দেশবাসী জানুক জেনারেল জিয়ার আমলে কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ ক্ষমতা দখলদার জিয়াউর রহমান নিজের তৈরি সামরিক আইন এবং আর্মি অ্যাক্ট লঙ্ঘন করে বেআইনিভাবে গঠিত সামরিক আদালতে কেস নম্বর-১, ১৯৭৬ সালের মিথ্যা সাজানো মামলায় প্রহসনমূলক বিচারে জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান আবু তাহেরকে জুলাই এর ২১ তারিখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। সেই মিথ্যা মামলায় বেআইনিভাবে গঠিত সামরিক আদালতে আমিসহ অনেক রাজনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তা, এনসিও, জেসিও বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হই। আমি ১৯৭৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৮০ সালের জুন পর্যন্ত লাগাতার ৫ বছর জিয়ার কারাগারে বন্দি ছিলাম।

ইনু আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকিরের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ ২০১১ সালের ২২ মার্চ একটা রায় দেয়। আমি, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, মেজর জিয়াউদ্দিন সবাই মিলে একটা রিট করেছিলাম। সেটা ২২ মার্চ আদালতের রায়ে নিষ্পত্তি হয়।

তিনি বলেন, কর্নেল আবু তাহেরে ফাঁসি অবশ্যই বিচার বর্হিভূত স্পষ্ট খুন। ফাঁসি কার্যকরণের কাজ নিন্দনীয় খুনি হিসেবে বিবেচিত। তাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করে তার পরিবারের ক্ষতিপূরণ দান এবং কর্নেল তাহেরকে দেশপ্রেমিক ও শহীদ হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ এসেছে।

হাসানুল হক ইনু বলেন, জিয়ার আমলে নিজের করা আর্মি অ্যাক্ট লঙ্ঘন করে অনেক সেনাকর্মকর্তা, এনসিও, জেসিও সেনাকে তড়িঘড়ি করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এদের সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এমনকি মরদেহগুলো তাদের পরিবারের কাছে দেওয়া হয়নি। এটা সম্পূর্ণ জুডিশিয়াল মার্ডার। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর রহস্যময় ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তৎকালীন দু’ মাসের মধ্যে ১ হাজার ১৪৩ জন সেনাকে ফাঁসিতে অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়। ক্যাঙ্গারু কোর্টে ৫০০ কমকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল। পশুপাখির মতো টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেয়ে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। প্রাণ না যেতেই রগ কেটে দেওয়া হতো। বাংলাদেশ কেন? পৃথিবীতে এমন হত্যাকাণ্ড হয়নি। এই হত্যার কমিশন গঠন করে এর তদন্ত এবং শ্বেতপত্র প্রকাশ করা উচিত।
পরে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ সিনিয়রের ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত সময়ের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে ডেপুটি স্পিকার তাতে বাধা দিয়ে বলেন, ‘সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধিবহির্ভূত কোনো কথা বলার সুযোগ সংসদে নেই।