মাদারীপুরে জোবেদা খাতুন (৮০) নামে এক বৃদ্ধাকে ছেলে ও ছেলের বউ রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদারীপুর পৌর শহরের শকুনী লেক পাড়ের রাস্তায় গভীর রাতে ফেলে যায় বলে জানা গেছে। দুই শিক্ষার্থী সকালে হাটতে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। ভর্তি করেন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে। প্রথম দিন নিজের নাম আর ছেলে ও ছেলের বউ মিলে ফেলে রেখে যাওয়ার কথাটুকুই বলতে পেরেছিল। তারপর থেকে আর কথা বলতে পারছে না। কিছুটা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে বৃদ্ধা। পরিবারের কেউ খোঁজ খবর নিতেও আসেনি।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি এই নারী প্রথম দিন নিজের নাম আর সন্তান-বউ মিলে ফেলে রেখে যাওয়ার কথাটুকুই বলতে পেরেছিলেন; তারপর থেকে আর কথা বলতে পারছেন না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চোখ বড় করে তাকিয়ে আছেন জোবেদা, হাত-পায়ে যন্ত্রণার ছাপ। মুখ উচিয়ে কি যেন বলতে চান, কিন্তু পারছেন না। স্মৃতি শক্তি হারিয়ে, এক প্রকার বাকশক্তিহীন জোবেদা খাতুনের ঠাঁই এখন হাসপাতালের বিছানায়।

স্থানীয়রা জানান, গত ৩১ অক্টোবর গভীর রাতে তার সন্তানরা মাদারীপুর শহরের শকুনী লেগের উত্তর পাড়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যান জোবেদাকে। সকালে সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বিলাস হালদার ও মেহেদী ইসলাম হাঁটার সময় হাতে-মাথায় রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন।

তাৎক্ষণিক তারা বৃদ্ধাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই দিন তিনি শুধু নিজের নাম এবং তার সন্তান ও বউ মিলে রাতে ফেলে রেখে গেছেন বলে জানিয়েছেন। তারপর থেকে আর কথা বলতে পারছে না তিনি।

উদ্ধারকারী শিক্ষার্থী বিলাস হালদার বলেন, ‘আমরা দুইজন বৃদ্ধাকে দেখে তাৎক্ষণিক সদর হাসপাতাল নিয়ে ভর্তি করি। তারপরে জেলা ছাত্রলীগের নেতা পিয়াস শিকদার, নাজমুল হোসেন, মাহমুদ হাসান দিনার, শাওন আহমেদ, অমল কুন্ডসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে বিষয়টি বলি। তারাও ওই দিন হাসপাতালে এসে বৃদ্ধার চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেন। ওই দিন বৃদ্ধা নিজের নাম ও তার সন্তান-বউ মিলে মারধর করে ফেলে গেছেন বলে জানান। তারপর থেকে আর কথা বলতে পারে না। শুধু তাকিয়ে থাকে। বর্তমানে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।’

আরেক উদ্ধারকারী মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই বৃদ্ধার পরিচয় পাওয়ার জন্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েছি। তারাও চেষ্টা করছে তার পরিচয় পাওয়ার জন্যে। তবে যদি কাউকে না পাওয়া যায়, তাহলে সমাজের কোন হৃদয়বান ব্যক্তিকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই। না হলে এই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তার।’

এব্যাপারে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘উদ্ধারের পর থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। কিছুটা মেডিসিনের অভাব দেখা দিলে সমাজসেবার সহযোগিতায় এনে চিকিৎসা দিচ্ছি। বর্তমানে বৃদ্ধা কিছুটা সুস্থ হলেও প্রচণ্ড মানসিক আঘাতে স্মৃতিশক্তি কিছুটা লোপ পেয়েছে। তবে তার আত্মীয়-স্বজনদের পেলে সব ঠিকও হয়ে যেতে পারে।’

বৃদ্ধাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে সরকারি সহযোগিতার কথা জানিয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সন্তানরা যদি এখনোও তার মাকে নিয়ে গিয়ে সেবা-যত্ন করতে চায়, আমাদের কোন অভিযোগ নেই। তবে যদি এমন অবস্থায় ফেলে রাখে, তাহলে তাদের পরিচয় পাওয়া গেলে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যদি কোন হৃদয়বান ব্যক্তি বর্তমানেও বৃদ্ধাকে নিতে চায়, তাহলে তাদের জিম্মায় দেয়া হবে। আমরা সরকারি পক্ষ থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।