ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার গেণ্ডারিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার আরেক বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে র‍্যাব-৩। সোমবার মধ্যরাতে রাজধানীর নারিন্দার লাল মোহন সাহা স্ট্রিটের ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলমের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সিন্দুক থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া। দুই ভাইয়ের এ বাড়িটি ছিল টাকার গোডাউন।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত থেকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে পুরান ঢাকার ওই বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।

অভিযান সংশ্লিষ্টরা জানান, গভীর রাতে পুরান ঢাকার ১১৯ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে এনামুল ও রূপন ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান শুরূ করে র‌্যাব। পাঁচতলা বাড়িটির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ওই ২০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। লোহার ভল্টের মধ্যে এক হাজার টাকার নোটের বান্ডেলগুলো থরে থরে সাজানো ছিল।

ফ্ল্যাটের চারটি কক্ষের মধ্যে তিনটি কক্ষ থেকে পাঁচটি ভল্ট থেকে ওই টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া এনামুল ও রূপনের নামে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার এফডিআর, বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার ও ক্যাসিনো সামগ্রী জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি সুজয় সরকার বাংলানিউজকে জানান, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ওয়ারীর ওই বাসার ভল্টে রক্ষিত প্রায় ২০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে টাকাগুলো গণনার কাজ চলছে।

তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপনদের গেণ্ডারিয়ার বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালিয়েছিল র‌্যাব। সে অভিযানে চারটি ভল্ট ভেঙে নগদ এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও ৭৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়েছিল।

গত সেপ্টেম্বরে শুরূ হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকেই আলোচনায় আসেন দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া। অভিযানের পর থেকেই তারা পলাতক ছিলেন।

অবশেষে গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর অদূরে কেরাণীগঞ্জ থেকে এনামুল ও রূপনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এনামুল ও রূপন গত ছয় থেকে সাত বছরে পুরান ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন কমপক্ষে ১২টি। ফ্ল্যাট কিনেছেন ছয়টি।

স্থানীয় লোকজন জানান, এ দুই ভাইয়ের মূল পেশা জুয়া। জুয়ার টাকায় এনামুল ও রূপন কেবল বাড়ি ও ফ্ল্যাটই কেনেননি, ক্ষমতাসীন দলের পদও কিনেছেন।

২০১৮ সালে এনামুল গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং রূপন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য, ঘনিষ্ঠজনসহ মোট ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে পদ পান। সরকারি দলের এসব পদ-পদবিকে জুয়া ও ক্যাসিনো কারবার নির্বিঘ্নে চালানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন তারা।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সরকার ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরূ করে র‌্যাব। সেদিন থেকে পর্যায়ক্রমে ঢাকার ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানো হয়।

এসব অভিযানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, শফিকুল আলম ফিরোজ, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান, হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজিব ও ময়নুল হক মঞ্জু, ঢাকা মোহামেডান ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াসহ সরকারি দলের অনেক নেতা গ্রেফতার হন। জব্দ করা হয় কোটি কোটি টাকা, মাদক ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম।