জেলা সংবাদ | তারিখঃ জানুয়ারি ৫, ২০২০ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1129 বার
নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার মির আলীপুর ও মীরওয়ারিশপুর গ্রামের আবাসিক এলাকায় ভূমি অধিগ্রহন নীতিমালা অমান্য করে হোসাফ ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন ও ক্ষতিপূরনের টাকা থেকে ভূমি মালিকদের বঞ্চিত করার অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পিটিশন নং ১৪২১৭।
জানা গেছে হোসাফ গ্রুপ আপানিয়ার নিকটে আবাসিক এলাকায় ১১৩ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট নির্মান করেন। পরে চৌমুহনী বিদ্যুৎ বিক্রয় ও সরবরাহ কেন্দ্রে সংযোগ স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ খুটি ও লাইন সম্প্রসারন কার্যক্রম শুরু করেন। স্থানীয় ভূমির মালিকদের ক্ষতিপূরন টাকা পরিশোধ না করে পিলার স্থাপন ও লাইনের কাজ শুরু করে। এতে ভুক্তভূগীরা ক্ষতিপূরনের টাকার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট গেলে প্রকল্প ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম গং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভূমি মালিকদের উপর একাধিক বার হামলা চালিয়ে নারী পুরুষসহ কমপক্ষে ১০/১২ জনকে আহত করে।বিদ্যুৎ পিলার ও তার স্থাপন এর জন্য বিদ্যুৎ আইন ২০১৮ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী ভূমির অধিগ্রহনের ১২ ধারা অনুসারে ক্ষতিপূরণ প্রদান করেনি হোসাফ কর্তৃপক্ষ।
ভূমির প্রকৃত মালিকরা একাধিকবার নির্যাতন নিপিড়নের শিকার হয়ে ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন আলো মহসিন বাদী হয়ে জেলা জজ কোর্টে পৃথক পৃথক দুইটি মামলা রুজু করে।
২ নং পিলার থেকে ১৩ নং পিলার পযর্ন্ত যে উচ্চতায় লাইন ও তার স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে উক্ত লাইনের আশপাশের কোন বসতির অবকাঠামো নির্মান করা সম্ভব হবে না। কিংবা গাছপালা লাগানো বা ফসল উৎপাদন করা ঝুঁকিপূর্ন। ১১৩ মেগাওয়াট পাওয়ারে তারের সামনে কোন কিছু করা সম্ভব নয়।
সূত্রমতে, ক্ষতিপূরনের কোটি কোটি টাকা কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভাগাভাগি করলে ও প্রকৃত ভূমি মালিকগণ ক্ষতিপূরনের টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। উল্টা ক্ষতিপূরন থেকে বঞ্চিত পরিবার সদস্য ও বাদী কে প্রানে হত্যা করার হুমকি প্রধান করছে বলে জানা যায়। ২৫ নভেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে ভক্তভোগীরা এ নিয়ে জেলা প্রশাসক নোয়াখালী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগমগঞ্জ বরাবর পৃথক পৃথক ভাবে অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাইকোট ডিভিশনের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ এনায়েতুর রহিম ও বিচারক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যাঞ্চ রুল জারি করেন। এবং কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে সিনিয়র সচিব পাওয়ার ডিভিশন জ্বালানী মন্ত্রণালয়, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারী কমিশন, কাওরান বাজার ঢাকা, জেলা প্রশাসক নোয়াখালী, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড, ওয়াপদা মতিঝিল ঢাকা, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড নোয়াখালী,উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেগমগঞ্জ নোয়াখালী, ম্যানেজার, হোসাফ ইলেকট্রিসিটি পাওয়ারপ্লান্ট সেন্টার বেগমগঞ্জ নোয়াখালীকে জবাব দেওয়া নির্দেশ দেন ।
সরজমিনে অনুসন্ধানে গেলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে এলাকাবাসী জানান, রহস্যজনক কারনে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এলাকায় ১/২ কিলোমিটার সীমানার প্রায় ১৫০০ বসত বাড়ী থাকলে ও দুর্নিতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সরকার দলীয় প্রভাবশালীদের ব্যবহার করে হোসাফের ম্যানেজার অনিয়ম করে দুর্নিতির আশ্রয় নিয়ে ক্ষতিপূরনের অর্থ প্রাপ্তি হতে ভূমি মালিকদের বঞ্চিত করেছে। লাইন নির্মানের কেন্দ্র বিন্দু থেকে উভয় পাশে ১৫ ফুট করে মোট ভূমির পরিমান নির্ধারন করার পর ক্ষতি পূরনের টাকা প্রদান করার বিধান থাকলেও কয়েকজন ব্যাক্তিকে যত সামান্য টাকা প্রদান করে স্ট্যাম্প কাগজে মুছলেখা নিয়েছে সরকার দলীয় প্রভাবশালীদের দিয়ে । এ বিষয়ে হোসাফের ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন ক্ষতি পূরনের টাকা দেওয়া হয়েছে। মোট কত টাকা প্রদান করা হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে হেড অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন।
ক্ষতিপূরনের টাকা না দিয়ে হোসাফের কর্মকর্তারা স্থানীয় দালাল চক্র দিয়ে সড়কের পাশের ভূমির অজুহাত দেখিয়ে প্রকৃত ভুমির মালিকদেরকে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য হতে বঞ্চিত করেছে বলে সচেতন মহলের অভিযোগ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন তাদের থেকে জোর পূর্বক মুছলেখা আদায় করা হয়েছে। অপরদিকে মিরওয়ারিশপুরের মজুমদারবাড়ী, মুন্সি বাড়ী, ইঞ্জিনিয়ার কাশেমের বাড়ী, চাপরাশি বাড়ী , নুরুজ্জামানের বাড়ী, মহাজন বাড়ী, রহিম মাষ্টারের বাড়ীর শত শত নারী পুুরুষ অভিযোগ করে বলেন স্থানীয় ভাবে দালাল চক্র দিয়ে হোসাফ মিটার কারখানা স্থাপনের নামে জমি ক্রয় করে ছিলো। কিন্তু এখন দেখা যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে প্রায় ১০০০ ডিং ভূমি ক্রয় করেছে বলে জানা গেছে।
বিদ্যুত উৎপাদন কার্যক্রমের উপর হাইকোর্ট ডিভিশন স্থগিতাদেশ দিলেও তারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ২২ শে ডিসেম্বর থেকে প্রথমিক ভাবে পরীক্ষা মূলক ভাবে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় কারখানার বিকট শব্দে ৩/৪ কিলমিটারের মধ্যে মানুষের ঘুম হারাম হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে বিদ্যুতপ্লান্টের বর্জ্য তেল ৭/৮ কিলোমিটার দূরে একলাশপুর গ্রাম পর্যন্ত বিভিন্ন গাছপালা দালান কোঠায় পুকুর ডোবায় ছিটিয়ে পড়ছে। কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫ (পাঁচ) কিলোমিটার এর চারদিকে যান্ত্রিক বিকট শব্দ দূষনের কারনে মানুষের শান্তি বিঘ্নত হচ্ছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে পরিবেশ বিপর্যয়কারী এই বিদ্যুত প্ল্যান্ট স্থাপনে সহযোগিতা করেছেন। সরকারদলীয় নেতারা স্থানীয় সাংবাদিকদেরকে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে যেন সংবাদ মাধ্যমে স্থানীয় সংবাদিকরা যেন কোন প্রতিবেদন না পাঠান।
Leave a Reply