জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ ডিসেম্বর ১২, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 502 বার
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন পাননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সর্বসম্মতিক্রমে তার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে এই আদেশ দেন।
তবে আবেদনকারী যদি চান তাকে অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট দেয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে আজ সকালে খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল প্রতিবেদন উপস্থাপনের মধ্যদিয়ে জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়।আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনের আলোকে খালেদার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের বিষয়টি শুনানিতে উঠে আসে। এরপর মানবিক বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে জামিনের আবেদন জানিয়ে তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন শুনানিতে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরিফের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘মাই লর্ড, যে পাকিস্তানকে আমার বর্বর দেশ বলে জানি সেই পাকিস্তানের উচ্চ আদালতই মেডিকেল গ্রাউন্ডে সে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জামিন দিয়েছে। এমনকি জামিনে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠিয়েছে। তাই আমারাই আপনাদের কাছে মানবিক বিবেচনায় খালেদা জিয়ার জামিন চাইতে পারি।
খালেদার এই আইনজীবী আরো বলেন, ‘মাই লর্ড, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা এমন যে, তার শরীরে মেডিসিন পুশ করা যাচ্ছে না। এভাবে আর ছয় মাস পর হয়ত সে লাশ হয়ে বের হবে। তাই আমরা মানবিক বিবেচনায় জামিনের জন্য আপনাদের কাছে এসেছি। উপরে আল্লাহ ছাড়া আর আপনারা ছাড়া আমাদের তো যাবার আর কোনো জায়গা নেই, তাই বারবার আপনাদের কাছে আসি। আপনারা ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্তকেও জামিন দিয়েছেন। আপনাদের এই আদালতেরই সিদ্ধান্ত আছে নারী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে জামিন বিবেচনা করার। উনি অসুস্থ, হাঁটাচলা করতে পারেন না। উনি তো আর পালিয়ে যাবেন না। তাই ওনাকে মানবিক বিবেচনায় জামিন দেয়া হোক।’
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জামিন আবেদনের বিরোধীতা করে বলেন, ‘ওনার প্রপার ট্রিটমেন্ট চলছে। এরপর দুদকের আইনজীবীও তার শুনানিতে জামিনের বিরোধীতা করেন।
এর আগে বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খালেদা জিয়ার সাস্থগত মেডিকেল প্রদিবেদন সুপ্রিম কোর্টে এসে পৌঁছায়।
আজকের আলোচিত এই জামিন আবেদনের শুনানিতে দুইপক্ষের ৩০ জন করে মোট ৬০ জন আইনজীবীকে আদালত কক্ষে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তবে শুনানির সময় আদালতে দুই পক্ষের শত শত আইনজীবীকে দেখা যায়।
এই জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার পুরো সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সকাল থেকেই কোর্টের প্রতিটি প্রবেশপথ ও আদালত চত্বরের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্যদের দেখা গেছে।
এছাড়াও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সামনে এবং বার ভবন থেকে মূল কোর্ট ভবনের গ্যাংওয়েতে নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মত। এর বাইরে আদালত অঙ্গনে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বাড়তি সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
সকাল আটটার পর থেকেই আর্চওয়ে এবং মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের পরিচয়পত্র দেখে আদালত চত্বরে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ খালেদার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থার মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন দিতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সময় আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এরপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে মেডিক্যাল প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির জন্য ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।
এই দিন ধার্যকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির আদালতে ওইদিন ২১০ মিনিটের ‘নজিরবিহীন’ হট্টগোল হয়। সেদিন একপর্যায়ে এজলাস ছেড়ে চলে যান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ। আদালত কক্ষের ওই হট্টগোলের প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতির আদালত কক্ষে ৮টি সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা বসানো হয়।
এর আগে এই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। সে খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান খালেদা জিয়া।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর এ মামলায় ৭ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। সে আপিলে বিচারিক আদালতের দেয়া সাজার রায় বাতিল এবং মামলা থেকে খালাস চাওয়া হয়। সেই সাথে জামিন আবেদনও করা হয়।
ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে এ মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। মামলার বাকি সব আসামিকেও একই সাজা দেয়া হয় এবং ট্রাস্টের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ঘোষণা করেন আদালত।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এ মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে ছিলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর সাবেক এপিএস জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস মনিরুল ইসলাম।
সর্বশেষ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজার রায় ঘোষণার পর বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে রয়েছেন।
Leave a Reply