অপরাধ সংবাদ | তারিখঃ ডিসেম্বর ৮, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 908 বার
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর এলাকায় এক কুয়েত প্রবাসীর বাড়ি থেকে ৩ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বানারীপাড়া থানা পুলিশ লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে। প্রাথমিকভাবে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড সন্দেহ করলেও কেন এবং কারা এই নৃশংসতা ঘটিয়েছে তা পুলিশ জানতে ও জানাতে পারেনি।
ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বিল্ডিং নির্মাণ শ্রমিক জাকির হোসেন নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক হওয়া জাকির হোসেন এর আগে আব্দুর রবের বাসভবনে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেছেন এবং তিনি প্রায়ই ওই বাড়িতে ঝাড়ফুঁক দিতে আসতেন।
নিহতরা হচ্ছেন- কুয়েত প্রবাসী আবদুর রবের মা মরিয়ম বেগম (৭৫), ভগ্নিপতি অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক শফিকুল আলম (৬০) এবং খালোতো ভাই ভ্যানচালক মো. ইউসুফ (৩২)। এর মধ্যে শফিকুল ৩ দিন আগে ওই বাড়িতে বেড়াতে আসে এবং ইউসুফ মাঝেমধ্যে সেখানে রাত্রিযাপন করত।
গত ১১ বছর ধরে কুয়েত প্রবাসে থাকা হাফেজ আব্দুর রব সেখানকার একটি মসজিদে ইমামতি করছেন। রবের স্ত্রী মিসরাত জাহান মিশু দুই সন্তান ইফাদ জাহান (৯) এবং নূরজাহান ও শ্বাশুড়িকে নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। তার বড় ছেলে ঢাকায় একটি মাদরাসায় হাফেজী পড়াশোনা করে।
জানা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাতে ওই বাসায় ছিলেন মিসরাত ও তার দুই শিশু সন্তান, শ্বাশুড়ি, ভাতিজী চাখার কলেজের এইচএসসি’র প্রথম বর্ষের ছাত্রী আছিয়া আক্তার, রবের ভগ্নিপতি শফিকুল আলম এবং খালাতো ভাই মো. ইউসুফ। ওই রাতে নাতনী আছিয়ার সাথে একই কক্ষে একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলেন বৃদ্ধা মরিয়ম।
গতকাল ভোর ৫টার দিকে আছিয়া ফজরের নামাজ পড়তে উঠে দাদিকে বিছানায় না পেয়ে খুঁজতে গিয়ে ব্যালকনিতে তার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে। তার চিৎকারে আশপাশের মানুষ এসে বাসার আরেকটি কক্ষে রবের ভগ্নিপতি শফিকুল আলমের এবং বাড়ির সামনে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় ইউসুফের পা বাঁধা লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবি করে গৃহকর্ত্রী মিশরাত জাহান মিশু বলেন, গ্রামের কারো সাথে তাদের কোন বিরোধ নেই। দুর্বৃত্তরা তার কক্ষের আলমিরা থেকে স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে গেছে দাবি করলেও তিনি কিছুই টের পাননি বলেও জানান। এ ঘটনার পর সন্তানসহ পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত মিশু।
প্রবাসী রবের ভায়রা হারুন সিকদার বলেন, নিহত শফিকুলের সাথে তার ছোট ভাই শহীদুল ইসলামের জমি নিয়ে বিরোধ ছিলো। এ নিয়ে তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে একাধিকবার সংঘাতও হয়। ৩ দিন আগে ওই বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে শফিকুল তার কাছে বিষয়টি অবহিত করেন। ওই ঘটনার জের ধরে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হতে পারে বলে সন্দেহ করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তিনি।
বরিশালের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ওই বাসার ভেতর থেকে সব দরজা-জানালা আটকানো ছিলো। গৃহকর্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী তার আলমিরা থেকে একটি বা দুটি স্বর্ণের চেইন খোয়া গেছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। নিহত ৩ জনের নাক এবং কান থেকে রক্ত ঝড়ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে আঘাত করে তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
Leave a Reply