রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে লাঞ্ছনা এবং পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনার মূলহোতাসহ ৫ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাতে রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ বেলপুকুর থানার বিসমিল্লাহ পেট্রোল পাম্পসংলগ্ন মোড় থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মামলার প্রধান আসামি কামাল হোসেন সৌরভ, দুই নম্বর আসামি মুরাদ, তিন নম্বর আসামি শান্ত, ছয় নম্বর আসামি সালমান ওরফে টনি এবং সাত নম্বর আসামি রায়হানুল হাসান হাসিব। তারা সবাই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতাকর্মী।

আরএমপির মুখপাত্র জানান, আরএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ এবং বেলপুকুর থানা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে অধ্যক্ষের করা মামলায় ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হলো। এছাড়া জড়িত বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, মিডটার্মে ফেল এবং ক্লাসে অনুপস্থিত ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভকে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে গত ২ নভেম্বর সকালে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিনের কার্যালয়ে গিয়ে চাপ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু রাজি না হওয়ায় অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের কথাকাটাকাটি হয়। এর জের ধরে ওই দিন দুপুরে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত এবং টেনেহিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় রাতেই ৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৫৭ জনকে আসামি করে মহানগরীর চন্দ্রিমা থানায় মামলা করেন অধ্যক্ষ।

এদিকে ঘটনা তদন্তে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান হিসেবে ছিলেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পিআইডব্লিউ) এসএম ফেরদৌস আলম। অন্য দুই সদস্য ছিলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) ড. নুরুল ইসলাম এবং রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওমর ফারুক। তারা দু’দিন ক্যাম্পাসে অবস্থান করে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পুকুরের পানির গভীরতা পরীক্ষা করেন। তদন্ত কমিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একটি টর্চার সেলেরও সন্ধান পায়। অবশেষে গত ৭ নভেম্বর কমিটির প্রধান কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক এসএম ফেরদৌস আলম মহাপরিচালক রওনক মাহমুদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এছাড়া ২ নভেম্বর রাতেই ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে ঘটনাটি তদন্ত করছে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ। তিন দিনের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তদন্তই শেষ হয়নি বলে জানা গেছে। তবে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। একই সঙ্গে রাজশাহী পলিটেকনিকে ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।