অপরাধ সংবাদ | তারিখঃ নভেম্বর ১৭, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1187 বার
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে গত দু’দিন যাবৎ গুরুতর অসুস্থ বোন জামাইয়ের চিকিৎসা চলছে। উনার শয্যাপাশে ছিলেন শ্যালক ও অসুস্থ ব্যক্তিটির মেয়ে (১৮)। ক্লান্ত ভাগ্নিকে তার নানাবাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরবগঞ্জ এলাকায় যেতে বলেন এবং নিজে বোন জামাইয়ের পাশে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।
শনিবার রাত দশটার দিকে ভাগ্নিকে একটি গাড়িতে তুলে দেওয়ার জন্য মামা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের ফটকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় একটা প্রাইভেটকার আসে। প্রাইভেটকার ভৈরব বাজারের দিকে যাবে। কারটি থামে এবং ড্রাইভার জানায় সে লোকাল যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে এ সময় গাড়ির পেছনে যাত্রী বেশে একজন বসা ছিলেন। ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে ভাগ্নিকে প্রাইভেট কারে তুলে দেন মামা জহিরুল ইসলাম। ভাগ্নিকে গাড়িতে তুলে দিয়ে মামা হাসপাতালে বোন জামাইয়ের কাছে ফিরে যান। তার কিছু সময় পর মেয়েটির ফোন নম্বর থেকে মামাকে কল করে বলে ‘আমাকে বাঁচাও আমাকে ড্রাইভার নামিয়ে দিচ্ছে না, আমাকে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে’। এ সময় মামাকে লাইনে রেখেই মেয়েটা বলতে থাকে ”আল্লাহ’র দোহাই আমাকে নামিয়ে দেন, আমার আব্বা হাসপাতালে মারা যাবে যদি আমার কিছু হয়” এর পর লাইন কেটে যায় এবং মেয়েটির নম্বর বন্ধ হয়ে যায়।
রাত ১টার দিকে স্থানীয় সাংবাদিক রিপন দে’র মোবাইলে অপরিচিত নম্বর থেকে একটি কল আসে। অপরপ্রান্ত থেকে জহিরুল ইসলাম নামে একজন কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করেন তার ভাগ্নিকে (১৮) প্রাইভেটকার ড্রাইভার অপহরণ করেছে। ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, তার বোন জামাইয়ের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিনাপুর এলাকায় এবং তার বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরবগঞ্জ এলাকায়।
ঘটনার বিবরণ জেনে ওই সাংবাদিক মধ্যরাতে বিষয়টি মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলামকে জানান। তিনি বিষয়টি জেনে সঙ্গে সঙ্গে ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। মধ্যরাতেই অভিযান শুরু করেন। প্রায় ৩ ঘণ্টার অভিযানে (রাত ৪টার দিকে) কমলগঞ্জ উপজেলায় দেওড়াচরা চাবাগান থেকে মেয়েটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ সময় গাড়িটি আটক করেন তবে ৪ জন অপহরণকারী পালিয়ে যায় তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম জানান, মেয়েটির ভাগ্য ভাল যে ঠিক সময় আপনার মাধ্যমে তথ্য পেয়েছিলাম। ঘটনাস্থলের আলামত দেখে বুঝতে পারছি তাকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে তারা চাবাগানে নিয়ে এসেছিল। প্রথমে গাড়িতে ২ জন থাকলেও পরে আরও ২ জন যুক্ত হয়। ৪ জন মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে হয়তো মেরে ফেলত। ঘটনাস্থলে মদের আলামত মিলেছে।
পুলিশের গাড়ির উপস্থিতি বুঝতে পেরে ৪ অপরাধী পালিয়েছে তবে প্রাইভেটকারটি আটক করা হয়েছে এবং মেয়েটিকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি। অভিযুক্তদের দ্রুত আটক করা হবে। এ ঘটনায় সকালে মামলা হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, উদ্ধারের পর মেয়েটি জানিয়েছে সে বাঁচার জন্য প্রচুর চিৎকার করেছে, কিন্তু নির্জনস্থান হওয়াতে তা কারও কানে পৌঁছায়নি। এবিষয়ে ঐ স্থানীয় সাংবাদিক রিপন দে বলেন, ‘এটা আমার সাংবাদিকতা জীবনের সফলতা বলে মনে করছি।’উৎস -বিডি প্রতিদিন
Leave a Reply