অপরাধ সংবাদ | তারিখঃ অক্টোবর ১১, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 623 বার
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানের মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক, এক কোটি টাকার এফডিআর ও নগদ দুই লাখ টাকা জব্দ করেছে র্যাব সদস্যরা।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকালে তার বাসায় অভিযান চালায় র্যাব।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর হিসেবে পাওয়া সম্মানী ছাড়া দৃশ্যমান কোনো আয় না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও অষ্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির মালিক হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান।
রাজধানীর আদাবর ৩২নং ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পন্থায় বিপুল পরিমান অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আটকের জন্য সম্প্রতি অভিযান শুরু করে র্যাব। এর মধ্যেই তিনি কৌশলে ঢাকা থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি পাগলা মিজানের।
শুক্রবার শ্রীমঙ্গলের কলেজ গেট এলাকায় বান্ধবীর বাসা থেকে তাকে আটক করে র্যাব। এসময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলি ও নগদ ২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। তিনি সীমান্ত এলাকা হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে জানায় র্যাব।
এরপর মিজানকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার লালমাটিয়া এলাকায় তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। তবে সেখানে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। এরপর তাকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব রোডের পান্থনীড় ভবনে তার ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয় ।
সেখান থেকে ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক, এক কোটি টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার প্রিমিয়ার ব্যাংকের তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৬৮ লাখ টাকা উত্তোলন করার ডকুমেন্টস পাওয়া গেলেও সেই নগদ টাকা উদ্ধার করা যায়নি।
র্যাব জানায়: প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিজান কাউন্সিলর হিসেবে ৩৬ হাজার টাকা সরকারি সম্মানীর বাইরে কোনো আয়ের কথা বলতে পারেননি। কিন্তু তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের চেক ও এফডিআর উদ্ধার করা হয়েছে। সেসব অর্থের বিষয়ে মিজান কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। ১৫ বছর আগে তার ইটভাটার ব্যবসা থাকলেও এখন আলাদা কোনো আয়ের উৎস নেই।
অন্যদিকে টেক্সাস ও সিডনিতে তার বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ির তথ্য পেয়েছে র্যাব। দেশ থেকে অবৈধ আয়ের অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন পাগলা মিজান, এমনটাই ধারণা করছেন তারা।
তার বিরুদ্ধে জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসাসহ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদাবাজি ছাড়া ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে বৃহস্পতিবার ৬৮ লাখ টাকা উত্তোলনের বিষয়ে অভিযান সংশ্লিষ্টরা জানান: পাগলা মিজানকে এই টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে একাধিকবার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। একেকবার একেকজনের কাছে টাকা রেখেছেন বলে জানিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে এই টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি এই বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করেছিলেন। পরবর্তী তদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।
অভিযানে থাকা এক কর্মকর্তা জানান: শ্রীমঙ্গলে বান্ধবীর বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন পাগলা মিজান। আটকের সময় নিজের পরিরিচয় গোপনের চেষ্টা করেন তিনি। সে নিজেকে বারবার মিজান বলে অস্বীকার করেন এবং হাবিব বলে পরিচয় দেন।
মোহাম্মদপুরে পাগলা মিজানের বাসায় অভিযানের সময় পাগলা মিজানের ফাঁসির দাবিতে মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের ব্যবসা পাগলা মিজানের নিয়ন্ত্রণে। মিজানের অনিয়ন্ত্রিত চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন: চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে আমরা কয়েকদিন ধরে মোহাম্মদপুর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানকে আটকের চেষ্টা করছিলাম। তার বিরুদ্ধে জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসাসহ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সে গত দু’তিন দিন আগে ঢাকা থেকে পালিয়ে যায়। শুক্রবার শ্রীমঙ্গলের কলেজগেট এলাকা থেকে তার এক বান্ধবীর বাসা থেকে মিজানকে আটক করা হয়েছে।
গ্রেফতার সময় তার কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে। তাই তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে এবং স্থানীয় থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করা হবে। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা হবে। পরে তদন্তে যদি আরও কোনো অভিযোগ আসলে সেই অনুযায়ী আরও মামলা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সারোয়ার আলম বলেন: সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় তাকে আমরা আটক করেছি। শুধু কাউন্সিলর নয় দেশের যেকোনো নাগরিক অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করলে তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
তিনি বলেন: তার বিরুদ্ধে মাদক ক্যাসিনো ব্যবসাসহ চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির সকল অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার হামলা এবং অতীত জীবনে ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।
পাগলা মিজান
Leave a Reply