জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ অক্টোবর ৭, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 822 বার
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের মেধাবী এ শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তার সহপাঠীরা। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে বুয়েট।
ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে সোমবার সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এদিকে এ ঘটনায় সকাল থেকেই সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধারের দাবিতে প্রভোস্টের অফিস ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। সিসিটিভির ফুটেজ চেক করতে গিয়ে দেখা যায় রাত ২টা ৬ মিনিটের পর থেকে সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ফুটেজ উদ্ধারে সাত ঘণ্টার মতো সময় লাগবে এরপর জানা যাবে ঘটনার মূল কারণ। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার রাত আটটার দিকে আবরার ফাহাদসহ দ্বিতীয় বর্ষের ৭-৮ জন শিক্ষার্থীকে শের-ই-বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে পাঠান তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৭/৮ জন নেতা। তারা আবরার ফাহাদের মুঠোফোন ঘেটে শিবির-সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ খোঁজেন। এক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে পেটাতে শুরু করেন ছাত্রলীগের নেতারা। পরে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী ওই কক্ষে গিয়ে আবরারকে আরেক দফায় পেটান। এতে তার মৃত্যু হলে রাতে সহপাঠীদের ডেকে লাশ সিঁড়ির নিচে রাখতে বলা হয়।
তাদের ধারণা, ২ হাজার ১১ নম্বর রুমে নিয়ে তাকে পেটানো হয়। পরে শেরেবাংলা হলের একতলা ও দুই তলার মাঝখানের সিঁড়ি থেকে ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ফাহাদের এক সহপাঠী একটি বেসরকারী টেলিভিশনকে বলেন, ‘যারা ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যায় তাদের আমরা চিনি। কিন্তু এ মুহূর্তে তাদের নাম বলতে চাচ্ছি না।’
তবে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে, এ বিষয়ে এখনও কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ ও বুয়েট প্রশাসন। ফাহাদ হত্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুয়েটের শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল ও সহসভাপতি ফুয়াদকে আটক করেছ পুলিশ।
হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, আবরারকে জেরা ও পেটানোর সময় ওই কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবা বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন৷ ওই কক্ষে এসে দ্বিতীয় দফায় আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ কয়েকজন।
এর আগে রবিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলা থেকে ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ও তার পরিবার বলছে, ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। শরীরের পেছনে, বাম হাতে ও কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত আঘাতের কালো দাগ ছিল। মৃত আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
ফাহাদের মামাতো ভাই জহিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ফাহাদের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না। সে কুষ্টিয়ায় গিয়েছিল। গতকালকেই বিকালে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসে হলে ওঠে। তার পর মধ্যরাতে খবর পাই ভাই মারা গেছে।
ঘটনার বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ জাফর ইকবাল খান বলেন, ‘রাত পৌনে তিনটার দিকে খবর পাই যে এক শিক্ষার্থী হলের সামনে পড়ে আছেন। কেন সে বাইরে গিয়েছিল, কী হয়েছিল, তা এখনও জানা যায়নি। তাৎক্ষণিকভাবে বুয়েটের চিকিৎসক দিয়ে তাঁকে পরীক্ষা করা হয়। ঐ চিকিৎসক জানান তিনি বেঁচে নেই। পরে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ এসে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে ঘটনাস্থলে আসা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুয়েটের চিকিৎসক মাশরুক এলাহী বলেন, ‘খবর পেয়ে তিনটার সময় ঘটনাস্থলে আসি। এক তলা ও দোতলার মাঝামাঝি জায়গাতে আবরারকে পড়ে থাকতে দেখি। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বুঝতে পারি ছেলেটি বেঁচে নেই। কী কারণে আবরারের মৃত্যু হয়েছে এমনটি জানতে চাইলে মাশুক এলাহী বলেন, ‘আঘাতজনিত কারণে সে মারা গেছে। সেই সম্ভাবনাই বেশি।’
চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাত পৌনে ৩টার দিকে আমরা যে, শের-ই বাংলা হলের বাইরে নিচতলায় ছেলেটা পড়ে আছে। হল কর্তৃপক্ষই পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে আসি। ছেলেটির পরনে ছিল ট্রাউজার ও শার্ট।
আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আঘাত কোনো অস্ত্রের নয়। কোনো কিছু দিয়ে বাড়ি দেওয়া হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
Leave a Reply