জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 413 বার
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সেখান থেকে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও সহ সভাপতি নিয়ামুল হাসান তাজ।
এই টাকা তাদের অনুসারীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তারা।
আর এ কথা স্বীকার করায় তারা হুমকির মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবার বিকাল থেকে এই দুই নেতার এবং শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোল্লার মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের গেস্ট রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন।
ঈদের আগে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের কাছ থেকে ছাত্রলীগ ১ কোটি টাকা সালামি পেয়েছে বলে সংগঠনটির একাধিক নেতা স্বীকার করেন।
ওই ১ কোটি টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকার ভাগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন জাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হাসান তাজ।
তিনি যুগান্তরকে বলেন, ঈদের আগে এক কোটি টাকার চাঁদা থেকে আমি ও সাদ্দাম (জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক) ২৫ লাখ টাকার ভাগ পেয়েছি।
বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পরই হুমকি পাচ্ছেন ও তাদের মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘গত ৯ আগস্ট উপাচার্যের বাসায় যে প্রকল্পের টাকা ভাগ বাটোয়ারা করা হয়েছে সেই তথ্য আমি গণমাধ্যমে দিয়েছি। তার কারণে আমি নানারকম হুমকি পাচ্ছি। গত কয়েকদিন আগে আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে। আজ বিকেল থেকে আমার মোবাইল ফোন থেকে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।’
শুধু তারই নয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নিয়ামুল হোসেন তাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোল্লার ফোনের কানেকশন অফ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকার বিরোধী তথ্য ফাঁস করছি এই কারণে আমাদের এই তিনজনকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে বলা হচ্ছে। এসব হুমকিতে আমরা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছি।
সংবাদসম্মেলনে সাদ্দাম হোসাইনের এমন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে গিয়ে জানা যায় শুধু এই তিন ছাত্রলীগ নেতা নয় বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ও উপাচার্য বিরোধী বলে পরিচিত একাধিক শিক্ষকের মোবাইল ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
এর মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরিফ এনামুল কবীর।
তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় এসব শিক্ষকের মোবাইল সংযোগ ঠিক হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ১৩ সেপ্টেম্বর শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর কথোপকথনের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে রোববার। সেখানে সাদ্দাম ও তাজের ২৫ লাখ টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
একই সঙ্গে লেনদেন হওয়া মোট এক কোটি টাকার দুর্নীতির হিসাব দেখান সাদ্দাম। এছাড়া এই দুর্নীতির সঙ্গে ভিসির ছেলে, স্বামী, একান্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালকের সম্পৃক্ততা দেখানো হয়।
শাখা ছাত্রলীগ ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঈদের আগে ৯ আগস্ট ভিসির বাসভবনে প্রশাসনের সঙ্গে ৪ ছাত্রলীগ নেতার আলোচনা হয়। সেখানে এক কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়। তাদের মধ্যে নিয়ামুল হাসান তাজ ও সাদ্দাম হোসেন ছিলেন। এরা দু’জন গোলাম রাব্বানীকে অনুসরণ করতেন।
এদিকে ফাঁস হওয়া কথোপকথনে যে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা-ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে টাকা ভাগের কোনো আলাপ হয়নি। তিনি কাউকেই অর্থ প্রদান করেননি। গোলাম রাব্বানী উপাচার্য মহোদয়কে বিতর্কিত করার জন্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই ফোনালাপের গল্প তৈরি করেছেন।
প্রশাসনের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ২৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা আবারও স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, প্রশাসন দাবি করছে আমরা মিথ্যা গল্প বলছি। তাই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ না করে প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কী কনভারসেশন (আলোচনা) হয়েছে, সেটি বের করলেই ক্লিয়ার (পরিষ্কার) হয়ে যাবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, ভিসির ছেলের সঙ্গে আমার ও তাজের ৯ আগস্টের আগে ও পরে কী কনভারসেশন (মুঠোফোনে কথোপকথন) হয়েছে, সেগুলো বের করা হলে সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে- এই দুর্নীতির সঙ্গে কে জড়িত এবং কে কত টাকা পেয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি চায় বিষয়টি উদ্ঘাটন করবে তবে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।
আন্দোলন দমাতে প্রশাসন শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি টাকা দেয় বলে সংগঠনের সহসভাপতি হামজা রহমান অন্তর স্বীকারও করেছেন। তিনি বলেন, জাবিতে অপরিকল্পিত উন্নয়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে।
এটা ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি টাকা দেয়। এ বিষয়ে সোমবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে ভিসি, তার স্বামী, ছেলে এবং প্রশাসনের মধ্যস্থতায় শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি টাকা দেয়া হয়। আমাকেও ঈদ সেলামির নামে টাকা অফার করা হয়। কিন্তু আমার সন্দেহ হওয়ায় টাকা নিতে রাজি হইনি।
ঈদ সালামি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগকে ১ কোটি টাকা দিয়েছে বলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন যে দাবি করেছেন, সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তিনি বলেছেন, সাদ্দাম মিথ্যা বলছেন, তিনি এই মিথ্যা বলা বন্ধ না করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উৎস -যুগান্তর
Leave a Reply