অপরাধ সংবাদ | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 306 বার
লাগামহীন লুটপাটেরই যেন আয়োজন। নদী একটা, এলাকাও একটাই, কিন্তু তার তীর সংরক্ষণ ব্যয় তিন ধরনের। আর এই ব্যয় ব্যবধান ৯ থেকে ১৫ কোটি টাকা প্রতি কিলোমিটারে। প্রতিটি সাইনবোর্ড বানাতে ব্যয় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। স্ট্যাম্প ও সিল বাবদ খরচ ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর এই খরচ প্রস্তাব করা হয়েছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সন্দ্বীপ চ্যানেলের ভাঙনরোধে ৪.৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে। উন্নয়ন প্রকল্পে মন্ত্রণালয়গুলোর খরচের প্রস্তাবনায় কোনো ধরনের লাগাম নেই। ব্যয়ের মাত্রা বছর অতিক্রম করলেই বৃদ্ধি পায়। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিপালন করা হচ্ছে না। কোনো কোনো খাতের ব্যয় অযৌক্তিক হিসেবে বাদ দেয়ার জন্য বলা হলেও তা কিছু কমিয়ে বহাল রেখে আবারো প্রস্তাব করা হয়। আবার বিভিন্ন চাপে প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদনের সুপারিশও করতে হয় বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি ১১৮ কোটি ৩০ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে তীর সংরক্ষণের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পটি হলো নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সন্দ্বীপ চ্যানেলের ভাঙন থেকে মুসাপুর ক্লোজার, রেগুলেটর এবং সংলগ্ন এলাকা রক্ষার জন্য মুসাপুর রেগুলেটরের ডাইভারশন চ্যানেল ও সন্দ্বীপ চ্যানেলের বাম তীর প্রতিরক্ষা। এখানে ৪.৪ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি ৮৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ১.৩ কিলোমিটার রোড নির্মাণ ও কার্পেটিং খরচ ৩ কোটি ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা। প্রকল্পের পাঁচটি সাইনবোর্ড তৈরিতে ব্যয় হবে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা। সিল ও স্ট্যাম্প খাতে ব্যয় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
পিইসির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, গড়ে প্রতি কিলোমিটার তীর সংরক্ষণে ব্যয় হবে ২২ কোটি ৯৩ লাখ ২ হাজার টাকা। একই নদীর একই এলাকায় তীর সংরক্ষণে ব্যয় হচ্ছে তিন ধরনের। মুসাপুর রেগুলেটরের ডাইভারশন চ্যানেলের ভাটিতে ১.৩ কিলোমিটারের জন্য ব্যয় ২২ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এখানে কিলোমিটারে ব্যয় হবে ১৭ কোটি ৫৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। আর একই চ্যানেলের উজান তীরে ৬০০ মিটার বা আধা কিলোমিটারের একটু বেশির জন্য ব্যয় ১১ কোটি ২২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। অন্য দিকে চ্যানেলের ভাটির বাম তীরে আড়াই কিলোমিটারের জন্য খরচ ৬৬ কোটি ৮৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এখানে কিলোমিটারে ব্যয় হবে ২৬ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এ দিকে সরকারের নেয়া উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রকল্পে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের মাধ্যমে অর্থের অপচয় করা হচ্ছে। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রধানমন্ত্রী পানিসম্পদ সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে নদীসংক্রান্ত প্রকল্প ভালোভাবে যাচাই করেই অনুমোদনের জন্য পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান। উত্তরবঙ্গের দুই জেলার নদীর তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ নির্মাণের জন্য নদী ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু এই নির্দেশনাগুলো মানা হচ্ছে না প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরিতে।
প্রকল্পের প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে, নতুন ডাকাতিয়া ও পুরনো ডাকাতিয়া ছোট ফেনী নদী নিষ্কাশন প্রকল্প শীর্ষক প্রকল্পটি ২০০৩ সালের শুরু হয়ে ২০১৭ সালে সমাপ্ত হয়। এরপর ২০০২ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জের মুসাপুর নামক স্থানে মে ২০০৯ সালে রেগুলেটর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। ২০১৫ সালে সেগুলোর ক্লোজার নির্মাণ করা হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের সেচ উইং বলছে, নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে প্রতি কিলোমিটারে এই ব্যয়ের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে হবে। এখানে কাজের চেইনেজ, স্থান, নকশা ও ব্যবহৃত মালামালের বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে। ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে। একই ভাবে রাস্তা নির্মাণ ও কার্পেটিংয়ে যে ব্যয় ধরা হয়েছে তাও যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। ৪৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা ব্যয়ে আধা কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে সেচ উইং।
২ কিলোমিটার বিদ্যুতায়নে ৬৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয় জানতে চেয়ে তারা। পাঁচটি সাইনবোর্ড নির্মাণে এত ব্যয়ের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এটি বাদ দিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের চুক্তির ভেতর অন্তর্ভুক্তির জন্য পিইসি থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্ট্যাম্প ও সিল বাবদ প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয়কে এক লাখ ৬০ হাজার টাকায় কমিয়ে আনার জন্য বলেছে। সেমিনার ও কনফারেন্স খাতে সাত লাখ টাকা রাখার কোনো যুক্তি নেই বলে উল্লেখ করে এটিও বাদ দেয়ার জন্য বলেছে সেচ উইং।সূত্র-নয়া দিগন্ত
Leave a Reply