বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি হত্যার সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও নীরবতা পালন করে আসছে বর্তমান সরকার। সীমান্ত হত্যা নিয়ে রাষ্ট্র একবারে চুপ করে বসে আছে। প্রতিবাদের পরিবর্তে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বিএসএফের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দুনিয়ার কোনো দেশের সীমান্তে এত হত্যা ও রক্তপাতের একতরফাভাবে ঘটনা ঘটেনা। রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে প্রতিবাদ হলে এসব ঘটনা কমতে পারত। কিন্তু সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্ত নিরাপদ হচ্ছে না। সীমান্ত হত্যা বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা ও নির্যাতন আরও বেড়ে গেছে । বেড়েছে বিএসএফের নৃশংসতার ধরনও। বিশেষ করে দেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় আটক বাংলাদেশিদের প্রতি ভয়ংকর নৃশংস আচরণ করেছে বিএসএফ। বিএসএফ বাংলাদেশিদের ওপর যে নিষ্ঠুর আচরণ করছেন তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আটক বাংলাদেশিদের বিষয়ে আইন প্রয়োগের সুযোগ থাকলেও তাদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। সুযোগ পেলেই এদেশের নিরীহ লোকদের ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে। মানবধিকার সংস্থাগুলোর মতে চলতি বছরের ৬ মাসে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন ১৮জন বাংলাদেশি। গত তিন দিনে বিএসএফের গুলিতে ২ জন নিহত হয়েছে। গতকালও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নিমতলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছে। তার লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ। এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সাইফুল ইসলাম নামে অপর এক যুবক আহত হন।
মহাসড়কে টোলের টাকা কার পকেটে যাবে সে প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, মহাসড়ক থেকে টোল আদায়ে সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ গনবিরোধী। জনগণের পকেট কাটতেই এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। মহাসড়ক থেকে টোল আদায় করা হলে তা যাত্রীদের পকেট থেকেই দিতে হবে, যানজটের তীব্রতা বাড়বে, নষ্ট হবে সময়৷
তিনি বলেন, টোল থেকে আদায় হওয়া টাকার কত অংশ সরকারি কোষাগারে জমা পড়বে সেই প্রশ্নও রয়েছে। সরকার নিজেরা টাকা ওঠালে সেখানে দুর্নীতির কারণে নয়-ছয় হয়৷ আবার ইজারা দিলে খাতিরের লোকজনকে নামমাত্র মূল্যে দেওয়া হয়৷ ফলে সরকারি কোষাগারে খুব বেশি টাকা জমা পড়ে না৷ এছাড়া দেশের মহাসড়কগুলো টোল আদায়ের জন্য উপযুক্তই না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সারাদেশের অধিকাংশ রাস্তা খানাখন্দে ভরা। বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে মহাসড়কগুলোতেও। এসব কারণে সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। এছাড়াও নানা কারণে সকল সড়কে যানজট লেগেই আছে। যানজটের কারণে গাড়ি ঠিকমত চলতে পারে না৷ এর মধ্যে টোলঘর বসালে প্রতিবন্ধকতা আরো বাড়বে৷ যানজটের পরিমাণও বেড়ে যাবে৷
তিনি বলেন, এমনিতেই বাস ভাড়া অনেক বেশী । সড়কে টোল আদায় করলে বাস ভাড়া আরও বাড়বে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া পরিবহন মালিকরা নেন না। এখন টোলের টাকাও যাত্রীদের কাছ থেকে উঠানো হবে। এই টোলের ফলে যাত্রীদের অর্থ অপচয় হবে, সময় অপচয় হবে। ফলে যাত্রীরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।’
সরকার মুখে “টাইটানিক মার্কা”উন্নয়নের বূলি কপচালে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, মূলতঃ লুটপাটের নীতিতে দেশ চালাচ্ছে সরকার। জনগনকে নানা ট্যাক্সের মধ্যে বন্দি করে ফেলেছে সরকার। সিটি ও পৌর কর কিভাবে বাড়ানো হয়েছে। একটা ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে এখন ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছে বহুগুন। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল কয়েক বছরে বাড়িয়েছে ১০ গুনের বেশী। মানুষ মোবাইলে কথা বলবে সেখান থেকেও টাকা কেটে নিচ্ছে সরকার। সত্যিকারার্থে এ সরকার সারাদেশে লুটপাট চালিয়ে দেশকে ফোঁকলা করে ফেলেছে। এখন তাদের জনগণের ওপর ট্যাক্স না বসিয়ে তাদের কোন উপায় নেই। তাই একের পর এক ফন্দি করে জনগনের টাকা কেটে নিচ্ছে সরকার। তিনি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে এ ধরণের গণবিরোধী কর্মকান্ড থেকে সরে আসার আহবান জানান।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, জামিনে থাকলেও জামিন বাতিল আবারও কারাগারে পাঠানো হয়েছে দেশের প্রতিথ যশা আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন।