বিদেশ | তারিখঃ আগস্ট ২, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 464 বার
ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় রাশিয়ার সঙ্গে মাঝারি পাল্লার পরমাণু শক্তি (আইএনএফ) চুক্তি থেকে পুরোপুরি সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে তিন দশকের কৌশলগত স্থিতিশীলতার অবসান ঘটেছে। অর্থাৎ দুপক্ষই এবার অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে।
৩২ বছর আগে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভকে হাসি হাসি মুখে যে চুক্তিতে সই করতে দেখা গিয়েছিল, এই অগস্টে সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এল আমেরিকা। পরে রাশিয়াও জানিয়ে দিল, তারাও আর থাকছে না সেই চুক্তিতে। ফলে, ফের ‘ঠান্ডা যুদ্ধে’র দিনগুলি ফিরে আসার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৯৮৭ সালে রেগন ও গর্বাচভ যে চুক্তিতে সই করেছিলেন, তার নাম- ‘ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি (আইএনএফ)’। সেই চুক্তির প্রেক্ষিতে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার (৩১০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ মাইল) পাল্লার মধ্যে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে নিষিদ্ধ করেছিল আমেরিকা ও রাশিয়া। ফলে, ওই পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হানার ধাক্কা যে সইতে হবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছিল দু’টি দেশ। চুক্তির প্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালে ২ হাজার ৭০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে আমেরিকা ও রাশিয়া।
মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবে এ চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি থেকে সরে গেছে, যা আজ(শুক্রবার) থেকে কার্যকর হবে।
আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে অংশ নিতে বর্তমানে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অবস্থান করছেন পম্পেও। তিনি বলেন, এ চুক্তির মৃত্যুর জন্য এককভাবে রাশিয়া দায়ী।
এদিকে মস্কোও তিন দশকের এ চুক্তির মৃত্যু ঘোষণা করেছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তির মৃত্যু ঘটেছে।
এর আগে মাঝারি পাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনে একটি মোরাটোরিয়াম বা মুলতবি রাখার সময়সীমা কার্যকর করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রেয়াবকোভ। কিন্তু এখন চুক্তিটিরই মৃত্যু ঘটেছে।
সংবাদ সংস্থা তাসকে তিনি বলেন, মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনে একটি মোরাটোরিয়াম ঘোষণার কথা বিবেচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সদস্যদের প্রতি আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম।
‘রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বক্তব্যের সঙ্গে এই মোরাটোরিয়ামের তুলনা করা চলে। তিনি বলেছেন, নিশ্চিত কিছু অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র যদি ওই অস্ত্র মোতায়েন না করে, তবে রাশিয়াও বিরত থাকবে।’
১৯৮৭ সালে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ও সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্ভাচেভের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছিল। এতে ৫০০ ও ৫৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো অভিযোগ করে রাশিয়া নতুন ধরনের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে এ চুক্তি লঙ্ঘন করছে। যদিও মস্কো সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আমেরিকানদের অভিযোগ, তাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে, রাশিয়া ৯এম৭২৯ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। পরবর্তী সময়ে ন্যাটোও এ অভিযোগের সত্যতায় সায় দেয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, রাশিয়া যদি ওই চুক্তি বাস্তবায়ন না করে তবে যুক্তরাষ্ট্রও নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবে এবং মস্কোকে ২ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়।
এর পরেই নিজ দেশের চুক্তির বাধ্যবাধকতা স্থগিত করে দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস চুক্তির অবসানকে ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি মোটেও কমবে না, বরং বেড়ে যাবে।
Leave a Reply