বিদেশ | তারিখঃ জুলাই ২৫, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 500 বার
কনজারবেটিভ পার্টির নেতা বরিস জনসন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করে আরো শক্তিশালী ব্রিটেন গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, এখন থেকে সে কাজ শুরু হল। তিনি বলেন, স্বাধীনতা, মুক্তমত, আইনের শাসন এবং গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিতে হবে। ব্রিটিশ জনগণ আশ্বাসবাণী শুনতে চায় না, তারা দেখতে চায় কাজ। আর দেশবাসী যেমনটা চায় তাদের কল্যাণে এখন থেকেই সে কাজ শুরু হল। বরিস ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পার্লামেন্ট ও জনগণের স্বার্থে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এজন্য একটি চুক্তিতে উপনীত হতে পারলে ভালো, নতুবা কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট হবে। এরপর ব্রিটেন স্বতন্ত্রভাবে তার ভাগ্য নির্ধারণে দেশের জনগণের কল্যাণে নানা ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কর্মসংস্থান হবে। বয়স্করা আরো ভাল সেবা পাবেন। শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসব উন্নত জীবনের জন্য সবকিছু করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে এসে তার স্বাগত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার স্থানীয় সময় বেলা ৩টার পর বাকিংহাম প্যালেসে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে তাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান। এসময় তিনি তা গ্রহণ করেন। গত মঙ্গলবার টোরি দলের নির্বাচনে জেরেমি হান্টকে পরাজিত করে নেতা নির্বাচিত হন সাবেক সাংবাদিক বরিস জনসন। বাকিংহ্যাম প্যালেসে যাবার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। তবে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়।
এর আগে পদত্যাগ করেন সদ্য সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার স্থানীয় সময় বেলা ৩টায় বাকিংহাম প্যালেসে গিয়ে রানি এলিজাবেথের সাথে বৈঠক করে তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন মে।
এর আগে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শেষ ভাষণ দেন। তিনি বরিস জনসনকে প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য আগাম শুভেচ্ছা জানান এবং বলেন, ‘তার সফলতা হবে ব্রিটিশ জনগণেরই সাফল্য’। মে আরো বলেন, ‘বরিস জনসনের মতো একজনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পেরে আমি খুশি, যিনি যথাসময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া (ব্রেক্সিট) এবং দেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
স্বামী ফিলিপকে পাশে রেখে দেয়া ভাষণে তিনি আন্তরিক সহযোগিতার দেয়ায় তার সরকারের সময়ে কর্মরত সকলের প্রতি এবং পার্লামেন্ট কার্যকরে ভূমিকা রাখায় এমপিদের এবং সর্বোপরি ব্রিটিশ জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা তার জন্য ছিল ‘সেরা সম্মান’ এবং যারা তার সাথে কাজ করেছেন তাদের সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
‘এটি আকাক্সক্ষার এবং সুযোগের একটি দেশ এবং আমি আশা করি যে, একজন যুবতী যিনি একজন মহিলা প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছেন এখন জানেন যে, তিনি যা অর্জন করতে পারেন তার কোন সীমা নেই।’
এরও আগে পার্লামেন্টে বিরোধী লেবার পার্টির সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। বিরোধী দলীয় নেতা জেরেমি করবিনসহ লেবার পার্টির নেতারা একের পর প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন থেরেসাকে। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সব প্রশ্নের জবাব দেন। কনজারবেটিভ পার্টির তার সতীর্থরা তাকে হাততালি দিয়ে সমর্থন যোগান। বিদায়কালেও টোরি ও লেবার পার্টির সদস্যরা একযোগে তালি দিতে থাকেন। থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করলেও পার্লামেন্ট মেম্বার হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে জানান।
লেবার নেতা জেরেমি করবিন মিসেস মে জনসাধারণের সেবা করায় তাকে সম্মান জানান, কিন্তু অর্থনীতি, গৃহহীনতা এবং ব্রেক্সিটের ওপর তার রেকর্ডের সমালোচনা করেন। তিনি এসময় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান।
আলেকজান্ডার বরিস দ্য ফেফেল জনসনের জন্ম নিউ ইয়র্কে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব রেখে দিয়েছিলেন। ব্রিটেনের অভিজাত সমাজের আদর্শ প্রতিনিধি তিনি। বাবা ছিলেন ক‚টনীতিক। কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে ইউরোপীয় সংসদের সদস্যও হয়েছিলেন। অত্যন্ত অভিজাত স্কুল ইটনে পড়ে গ্রাজুয়েশন করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরুনোর পর পেশা হিসাবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেন। দি টাইমস পত্রিকায় কাল্পনিক একটি উদ্ধৃতি ব্যবহারের জন্য চাকরি খুইয়েছিলেন। তারপর আরো দুই একটি পত্রিকায় কাজ করার পর যোগ দেন বিখ্যাত দ্য টেলিগ্রাফে। ব্রাসেলসে ঐ পত্রিকার প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করতেন।
২০০১ সাল থেকে তৎকালীন বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির টিকেটে এমপি নির্বাচিত হলেও তিনি কখনও ছায়া মন্ত্রিসভায় ঢোকেননি। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা তাকে তেমন পছন্দ করতেন না। ২০০৮ সালে সংসদের রাজনীতি ছেড়ে তিনি লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন এবং তখনই ব্রিটেনের রাজনীতিতে ভিন্ন এক মাত্রা পেয়ে যান বরিস জনসন। সূত্র : বিবিসি ও সিএনএন।
Leave a Reply