ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলী এলাকার একটি তিনতলা ফ্ল্যাট বাড়ির নীচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক হোসেন (৩৮) ও কলেজ শিক্ষিকা সাজিয়া বেগম (৩৪) এর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ । পুলিশ জানিয়েছে, ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা ব্যাংক কর্মকর্তা ফারুক হোসেনের লাশ এবং মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় কলেজ শিক্ষিকার লাশ উদ্ধার করা হয়। দুটি লাশই ফারুক হোসেনের ফ্ল্যাটে পাওয়া গেছে। ফ্ল্যাট থেকে রক্তমাখা একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিক্ষিকার স্বামী শেখ শহিদুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। শেখ শহিদুল ইসলাম ঢাকায় মোটর পার্টসের ব্যবসা করেন। তিনি মাঝে মধ্যে ফরিদপুরে আসতেন। দুই ছেলে নিয়ে ঝিলটুলীর নুরুল ইসলামের বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকতেন তার স্ত্রী সাজিয়া। তবে রোবরার ঘটনার সময় ফরিদপুরে ছিলেন শহিদুল।
এ ঘটনায় ফরিদপুরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ মনে করছে, তাদের হত্যা করা হয়েছে। এটি আত্মহত্যা, নাকি হত্যাকাণ্ড- এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এরই মধ্যে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, তাদের মধ্যে পরকীয়া ছিল। ফলে পরকীয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে তদন্তে।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম নাসিম জানান, শিক্ষিকার লাশ দরজার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় এবং ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ ফ্যানের হুকের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার বুকে ক্ষত রয়েছে। ফ্ল্যাটে রক্তমাখা ছুরি পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দু’জনের পারিবারিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাদের মধ্যে পরকীয়া ছিল। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, শিক্ষিকাকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন ফারুক। তবে বেশ কিছু আলামত থেকে এটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে না। তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও অনুসন্ধান শেষে বিষয়টি পরিস্কার হওয়া যাবে।

কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসিম আরও জানান, ফারুক পরিচয় গোপন করে সাজিয়ার পাশের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর শহর শাখায় চাকরি করার তথ্য দিয়ে বাসা ভাড়া নিলেও তিনি মূলত ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের লিগ্যাল মেটারস বিভাগের প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা ছিলেন। ফারুক-সাজিয়া পরকীয়ার কারণে অন্য কারও ক্রোধের বলি হয়েছেন কি-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদে শহিদুলের কাছ থেকে কিছু জানা গেছে কি-না, জানতে চাইলে এ বিষয়ে এখনই কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান ওসি। এ ঘটনায় সাজিয়ার ফুফু আফসারী আহমেদ গতকাল অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন। ওসি বলেন, সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত চলছে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, আমরা একাধিক সূত্র ধরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আশা করি শিগগিরই সত্য জানাতে পারব।