খেলাধুলা | তারিখঃ মে ৯, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 455 বার
শেষ বাঁশি বাজার অপেক্ষা।ইনজুরি সময়ও পেরুতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড বাকি। ২৩ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার চূড়ান্ত উদযাপনের অপেক্ষায় আমস্টার্ডামের ইয়োহান ক্রুইফ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক আয়াক্স সমর্থকরা। এমন সময় তাদের হৃদয়ে যেন বিষাক্ত তীর ছুড়লেন হ্যাটট্রিক হিরো লুকাস মৌরা। অবিশ্বাসের মোড়কে মঞ্চস্থ নাটকীয় সেমিফাইনালে রোমাঞ্চকর জয়ে প্রথমবারের মত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠে গেল টটেনহাম হটস্পার।
বুধবার নেদারল্যান্ডসের আমস্টার্ডামে আয়াক্সকে ৩-২ গোলে হারায় সফরকারী টটেনহাম। প্রথম লেগে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল আয়াক্স। দুই লেগ মিলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-৩। অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে মাদ্রিদের মেত্রপলিতানো স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালে নিজেদের নাম লিখিয়ে নেয় মাউরিসিও পচেত্তিনোর দল। যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে প্রিমিয়ার লিগের আরেক দল লিভারপুল। ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার হতে যাচ্ছে অল-ইংলিশ ফাইনাল।
আগের রাতেও ঠিক এমনি এক নাটকীয় ম্যাচে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৪-০ গোলের ঐতিহাসিক জয়ে দুই লেগ মিলে ৪-৩ গোলে এগিয়ে ফাইনালে ওঠে ইয়ুর্গুন ক্লপের লিভারপুল।
নকআউট পর্বে এর আগে রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসকে হারিয়ে ফুটবল ভক্তদের মন জয় করা আয়াক্সের শুরুটা এদিনও ছিল সেই পরিচিত ভঙ্গিমায়। সফরকারীরাও পাল্টা আক্রমণে উঠলে ম্যাচ হয়ে ওঠে রোমাঞ্চকর। প্রথমার্ধে মাতিয়াস ডি লিট ও হাকিম জিয়াসের গোল টটেনহামের আশা ধুসর করে দেয়। উড়তে থাকা দলটির বিপক্ষে তখন তিন গোলের কঠিন সমীকরণ স্পার্সদের সামনে। দ্বিতীয়ার্ধে জোড়া গোল করে লন্ডনের দলটির আশার সলতে উজ্জ্বল করেন লুকাস মৌরা। তারই শেষ মুহূর্তের গোলে স্বাগতিকদের রূপকথার যাত্রায় যতিচিহ্ন বসে যায়।
ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে তিনটি বাছাইপর্ব পেরিয়ে ফাইনালে উঠে অনন্য কীর্তি গড়া আয়াক্স ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই টটেনহাম গোলরক্ষক হুগো লরিসকে পরীক্ষা নেয়। এ যাত্রায় ভন ডি বিকের শট ফিরিয়ে দিলেও পরের মিনিটে কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে নেয়া ডি লিটের হেডে কিছুই করার ছিল না ফরাসি গোলরক্ষকের।
দুই মিনিট বাদে সন হিউন মিনের দূরহ কোন থেকে নেয়া শট পোস্টে বাধা পায়। এরপরও বেশ কয়েকবার সুযোগ তৈরি করে স্পার্সরা। কিন্তু প্রথমার্ধে তারা জালের দেখা পায়নি।
৩৫তম মিনিটে দুসান তাদিচের বাড়ানো বল বাম প্রান্ত থেকে জোরালো উঁচু শটে জালে পাঠিয়ে ব্যবধান ২-০ করেন জিয়াস। ছয় গোলের পাশাপাশি এ নিয়ে চারবার গোলে সহায়তা করলেন তাদিচ।
বিরতি থেকে ফিরে ভিন্ন রূপে দেখা দেয় টটেনহাম। ৫৪তম মিনিটে তাগলিয়াফিকোর ভলি দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন আয়াক্স গোলরক্ষক ওনানা। কিন্তু পরের মিনিটে দলীয় পাল্টা আক্রমন করা লুকাস মৌরার শটে কিছুই করার ছিল না ওনানার।
চার মিনিট বাদে আবারো গোল করে সফরকারীদের নিভু নিভু আশা উজ্জ্বল করেন লুকাস মৌরা। জটলার মধ্য থেকে বাম পয়ের শটে ব্যবধান আরো কমান ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার।
৬৪তম মিনিটে জিয়াসের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটে প্রতি আক্রমণে উঠে গোলের খুব কাছে চলে যায় টটেনহাম। লরেন্তের হেড দুর্দান্তভাবে রুখে দেন ওনানা। ৭৯তম মিনিটে জিয়াসের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
গোলের জন্য মরিয়া হয়ে থাকা টটেনহামকে হতাশ হতে হয় ৮৭তম মিনিটে গোললাইন থেকে বল ফিরে আসলে। ভার্টোনেনের হেড লাগে পোস্টে, ফিরতি বলে তার শট গোললাইনে প্রতিহত হয়।
যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে ডেলে আলির বাড়ানো বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে নিচু শটে জয় নিশ্চিত করেন মৌরা।
শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে বিষ্ময়মাখা আনন্দের মাতম টটেনহাম খেলোয়াড়-অফিসিয়ালদের চোখে-মুখে। মাঠে লুটিয়ে পড়ে স্বপ্নভঙ্গের হতাশায় ভাষা হারিয়ে ফেলা আয়াক্স খেলোয়াড়রা।
Leave a Reply