জাতীয় স্বদেশ, বিদেশ | তারিখঃ এপ্রিল ২১, ২০১৮ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 1804 বার
রাশিয়ার হাজার হাজার মুসলিম পুরুষ তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বাহিনীতে যোগ দিতে প্রলুব্ধ হয় এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে দেশ ছাড়ে। কিন্তু গতবছর খিলাফত প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে তারা পরাজিত হলে এইসব পরিবার রীতিমত হাওয়া হয়ে গেছে।
রাশিয়ায় তাদের পরিবারগুলো তাদের সম্পর্কে খবর জানতে মরীয়া এবং ক্রেমলিন এসব শিশুদের ফেরত নিতে চাইছে। তাদের বক্তব্য, এই শিশুরা কোনও অপরাধ করেনি।
কিন্তু শিশুদের এবং তাদের মায়েদের খুঁজে বের করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ ।
ইরাকি কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের কাছে অনেক আইএস পরিবার আটক আছে কিন্তু তাদের নাম তারা প্রকাশ করবে না।
তবে বন্দী দশা থেকে সামাজিক মাধ্যমে কারও কারও পাঠানো বার্তা, ছবি, ভিডিও নারী ও শিশুদের আটকের বিষয়ে তথ্যসূত্র হিসেবে কাজ করে।
বিবিসির টিম হিইয়েল কয়েক মাস ধরে বিষয়টির অনুসন্ধান করছিলেন এবং তিনি ইরাকেও যান আরও তথ্যের সন্ধানে।
রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের চেচনিয়ার একটি বাড়িতে বসে মধ্যবয়স্ক একজন নারী তার মেয়ের ভিডিও দেখাচ্ছিলেন।
তার মেয়ের নাম সিয়াদা। ভিডিওতে দেখা যায়, ১৯ বছরের তরুণী সিয়াদার পরনে আঁটসাঁট টি-শার্ট আর জিনস প্যান্ট। তার মা নিজের মেয়ের সম্পর্কে কথা বলার সময় অনেক কষ্টে নিজের কান্না সংবরণের চেষ্টা করছিলেন।
“ব্রান্ডের যেকোনো জিনিস সে পছন্দ করতো। ব্যাগ, জামাকাপড়, জুতো, এখনো সেসব এখানেই আছে যেগুলো সে ঘরে ফেলে রেখে চলে যায় । ”
এসব সিয়াদার স্বামীর সঙ্গে ছুটিতে তুরস্কে বেড়াতে যাওয়ার আগেকার কথা।
২০১৫ সালে স্বামীর সাথে তুরস্কে যাওয়ার পর থেকে সে আর ফিরে আসেনি। তার স্বামী তাকে নিয়ে গেছে ইসলামিক স্টেট-এ যোগ দিতে।
তার মা জানান, “দুই সপ্তাহ পরে হোয়াটস আপে তার সাথে যোগাযোগ হয়। অনেকক্ষণ ধরে সে কাঁদতে থাকে। তার কান্না থামছিলই না। এরপর সে বলে , মা আমি সিরিয়াতে। সেই মুহূর্তে আমার পৃথিবী যেন অকস্মাৎ খান খান হয়ে গেল।”
তিন বছর হল সেখানে আইএস পরাজিত হয়েছে । সিয়াদার স্বামী ও অন্যান্য আইএস যোদ্ধারা নিহত হয়েছে। কিন্তু সিয়াদা কোথায়?
কোনও খোজ নেই সিয়াদার এবং তার দুই সন্তানের।
মধ্যপ্রাচ্যে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বহু রুশ নারীর একজন সিয়াদা।
আরেকজন মেয়ে রুশানা। সে ইরাকের কোনও একটি জায়গা থেকে মস্কোতে তার বোনের কাছে একটি বার্তা পাঠায়।
অডিও বার্তায় সে ফিসফিস করে বলে, ”কেন তারা আমাদেরকে বন্দী হিসেবে আটকে রেখেছে? আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারছিনা। এখানে ভীষণ ঠাণ্ডা। তারা এমনকি আমাদের কম্বলও দিচ্ছেনা।”
রুশানা এই বার্তা পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন তাকে যে রক্ষী পাহারা দেয় তার দয়ার কারণে। কারণ তার এবং আটক অন্যান্য মেয়েদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়।
রুশানা জানান, এই দুশো নারী ও শিশুকে দুটি কক্ষের ভেতর গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। তাদেরকে ইরানের পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়ার হুমকিও দিচ্ছে ইরাকী অপহরণকারীরা।
”তারা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কিছু ইরানি লোক আসে এবং আমাদের ভিডিও করে নিয়ে গেছে। আর কেবল সেই সময়টুকুই প্রথমবার আমাদের বাইরে নেয়া হয়েছিল।
আসলে তারা কোথায় আছে এবং কারা তাদের আটকে রেখেছে তা জানা সম্ভব হয়নি।
ইরাক ও সিরিয়ায় শতাধিক শিশু আর নারী ইরাকে পরাজিত আইএস যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্য ছিল, যাদের এখন কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এইসব শিশুদের ছবি নিয়ে পোস্টার তৈরি করছে একটি গ্রুপ যারা আইএস পরিবার গুলোকে ফিরে আনার জন্য ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোযনিতে।
তারা রাশিয়ার দুহাজার নারীও শিশুর কথা বলছে যারা নিখোঁজ রয়েছে। ইরাকের কর্তৃপক্ষ আটক হওয়া কিংবা নিহত হয়েছে এমন কোনও আইএস পরিবারের নাম জানায়নি।
তবে প্রতিবেদক পরবর্তীতে ইরাকি কমান্ডার আবু জাফর যিনি প্রভাবশালী একজন শিয়া যোদ্ধা তার সাথে কথা বলতে সক্ষম হন এবং প্রচণ্ড শীতে এইসব নারীদের আটকে রাখার বিষয়ে, শিশুদের নিউমোনিয়া সংক্রমণ এইসব বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে তা অস্বীকার করেন ওই ইরাকি কমান্ডার ।
তবে পরিবারের প্রিয় মানুষদের এভাবে হারিয়ে যাওয়া মানতে পারছে না সিয়াদার মায়ের মতো অনেক মানুষ।
প্রকৃতপক্ষে ইরাকি জেলখানায় প্রবেশ প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। সেখানে কোন আইএস বন্দীরা আছেন কিনা তাও জানা নেই।
এইসব পরিবারের অভিভাবকরাও জানেন না- তাদের প্রিয়জন বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন ? কবে তারা ফিরে আসবেন নাকি আদৌ কোনদিন ফিরবেন না?
Leave a Reply