জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ মার্চ ৮, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 414 বার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ভাষণের মাধ্যমেই স্বাধীনতার মূল ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষকে সশস্ত্র যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। খবর বাসসের
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার মূল ঘোষণা দেন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেন।’
তিনি বলেন, এই ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জাতির সামনে কেবল একটি স্বাধীন রাষ্ট্রই উপস্থাপন করেননি, বরং এর ভবিষ্যৎ কি হবে তাও তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা ও আদর্শ অনুসরণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে জাতির পিতা জাতিকে সকল দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাঙালিদের কী করতে হবে, তাও তিনি বলেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আশঙ্কা করেছিলেন যে, ভাষণের পর তিনি জীবিত নাও থাকতে পারেন। তাকে হত্যা করা হতে পারে, যেহেতু পাকিস্তানিরা বহুবার সে অপচেষ্টা করেছে। সে কারণে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের সকল ব্যবস্থা করে রাখেন। আমি তার নীরব সাক্ষী।’
আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখনকার ছাত্রনেতারা যারা এখনো বেঁচে আছেন তারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সাবেক ছাত্রনেতারা সংবাদপত্রের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু জনসভার আগে ভাষণ সম্পর্কে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাদের কথায় আমার হাসি পেয়েছে। কারণ, তারা পাগলের মতো কথা বলেছেন।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তার মায়ের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘জনসভার ঠিক আগে আমার মা বঙ্গবন্ধুকে বলেন, আপনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। জনগণ কী চায় এবং তাদের জন্য আপনার কী করতে হবে তা আপনি ভালো করেই জানেন। আপনার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। আমার মা বঙ্গবন্ধুকে আরো বলেন যে, নানা লোক নানা কথা বলবে। কিন্তু আপনার সব কথা শোনার দরকার নেই। আপনার মন থেকে যা আসবে আপনি সে কথাই বলবেন।’
সামরিক শাসকরা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু সকল বাধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ ভাষণ বাজিয়েছে।’
তিনি বলেন, ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না। সত্যকে চেপে রাখা যায় না। বিশ্বে এমন আর কোনো ভাষণ নেই যা মানুষ বছরের পর বছর শুনেছে। ৪৮ বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু এ ভাষণের আবেদন এখনো বিপুল এবং মানুষ এর ধারা অনুপ্রাণিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের একটি সংস্থা এ ভাষণকে মানব সভ্যতার অমূল্য দলিল হিসেবে স্থান দিয়েছে। এটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য বিশাল ও বিরল সম্মান।
বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে ত্যাগ ছাড়া কোনো কিছু অর্জন করা যায় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ও লাখো মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু ১৯৭৫ এর পর এই স্বাধীনতা প্রায় বৃথা হয়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২১ বছর পর আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলার এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাজানো গানগুলো বাজানোর ও চর্চা করার সুযোগ পেয়েছি। যে যুবশক্তি অন্ধকারে ছিল তারা ১৯৭৫ এর পর এগিয়ে আসে এবং আমরা আবার আলোর দিকে আমাদের যাত্রা শুরু করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক শাসকরা কেবল বঙ্গবন্ধুকে হত্যাই করেনি, তারা তাকে হত্যার পর তার নামও মুছে ফেলেছিল। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসকদের দ্বারা কিছু প্রজন্ম ভুলপথে চালিত হয়েছিল।
৭ মার্চের ভাষণের আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৪৮ বছর ধরে আমি এ ভাষণ শুনে আসছি। কিন্তু যখনই আমি শুনি তখনই আমি এটি নতুন করে শুনছি বলে মনে হয়। এ ভাষণ মানুষকে দেশের জন্য কাজ করার এবং ত্যাগ স্বীকার করার সাহস ও শক্তি যোগায়।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ : রাজনীতির কবি ও অমর কবিতা’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন বলেই ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ উচ্চারণ করেছিলেন। এ ঘোষণা না দিলে বঙ্গবন্ধু কাপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত হতেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তিনি স্বাধীনতা চান, প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়। তিনি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্রে পরিণত করেছিলেন।’
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ফারজানা ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের চেয়ারপারসন শিল্পী হাসেম খান মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।সূত্র-সমকাল
Leave a Reply