রাজনৈতিক কর্মকান্ড, গণতান্ত্রিক অধিকার, বাক-স্বাধীনতা ও ধর্মকর্ম পালনের অজুহাতে অধিক রাত পর্যন্ত মাইক বাজিয়ে মানুষকে কষ্টদান এবং শব্দদূষন করা কোনো বিচারেই সমীচিন হতে পারে না। মাইকের অপব্যবহারের যন্ত্রণায় জনগণ অতিষ্ট এবং বিরক্ত। সরকার দেখেও না দেখার ভান করছে। অথবা জনগনের অধিকারের প্রতি সরকারের নজর দেওয়ার সময় নেই। ওয়াজ মাফফিল আর নাম কীর্তনের নামে যে হারে শব্দ সন্ত্রাস হচ্ছে তা রুখবে কে?ওয়াজ-মাহফিল আয়োজককারীরা বলবে ইসলাম বিদ্বেষী মুরতাদ এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলবে সংখ্যালঘুদের ধর্মকর্মে বাধা দিচ্ছে সরকার। এই ভয়ে হয়ত সরকারের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কিছুই বলছেন না কিন্তু জনগনকে খাঁচায় বন্দি করে নিষ্পেষণ করার অধিকারও কারো নেই। অষ্ট প্রহর,যোল প্রহর নাম কীর্তন এর নামে যেভাবে দিন রাত সনাতন ধর্মীয়রা মাইক বাজান ঠিক সেভাবেই চলে ওয়াজ মাহফিলের বয়ান গভীর রাত অবধি । এখন চলছে পাড়ায় পাড়ায় মাদ্রাসা গড়ে তোলার হিড়িক। চলছে ওয়াজ মাহফিলের নামে তাদের ফান্ড কালেকশানেরর কাজ। আগে শীতকালে প্রতি গ্রামে অথবা কয়েক গ্রামে মিলে একবার ওয়াজ মাহফিল হত। তাতে দূর দূরান্ত থেকে ধর্ম প্রান মুসলামানগন তাফসির বয়ান শুনতে আসতেন । দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতেন। কিন্তু এখন চলছে মাহফিলের নামে শব্দ সন্ত্রাসের মহোৎসব । কিছু কিছু মাহফিলে চলে অশ্লিল ভাষায় নারী বিদ্বেষী উসকানিমূলক কথা বার্তা। শুনে মনে হয় রাজনৈতিক মঞ্চে কোন গলাবাজ গলা ফাটাচ্ছেন। এতে রাতে যিকিরকারী ও পূজারী একনিষ্ট মনে উপাসনা করতে পারছেন না। প্রেসার ও হার্টের রোগীসহ অনেক রোগে আক্রান্ত রোগীগণ নির্বিঘ্নে ঘুমাতে পারছেন না। অনেকে ঘুমের বড়ি খেয়েও বিছানায় গড়াগড়ি দিচ্ছেন, শিশুকে মা ঘুম পাড়াতে পারছেন না, ঘুমন্ত ব্যক্তি ও শিশুগণের বার বার ঘুম ভাঙছে।
সাম্প্রতিক বছর গুলোতে রাজনৈতিক অরাজনৈতিক সভা-সম্মেলনে, স্কুল-মাদরাসার ক্রীড়ানুষ্ঠানে, ওয়াজ-তাফসির সম্মেলনে, পূজা-গানের অনুষ্ঠানে,বিয়ে বাড়ীতে দুই-তিন কিলোমিটার পর্যন্ত মাইকের তার টেনে নেওয়া হয়। কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান,রাজনৈতিক অরাজনৈতিক সভা সন্মেলনে জনবহুল রাস্তায়, আবাসিক এলাকায় , হাসপাতাল অথবা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিকট , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালতের পাশ দিয়ে যেভাবে বিকট শব্দে মাইক বাজানো হচ্ছে তাতে আয়োজকদের প্রতি শ্রোতাদের বিরক্তিভাব আসছে কিনা আয়োজকদের এ নিয়ে ভাবতে হবে।

ধর্মও মানুষের জন্য। ধর্ম মানুষের জাগতিক কল্যাণে এবং পরকালে মুক্তির পথ বাতলে দেয়। মাহফিলে অথবা পুজা অর্চনা,বিয়ের অনুষ্ঠানে মাইক লাগানো গ্রহণযোগ্য।কিন্তু তাই বলে অনুষ্ঠানস্থল থেকে দূরে ১০ /২০ টি অথবা ততোধিক মাইক লাগিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারও ঘরে রোগী, কারও ঘরে ছেলে–মেয়েরা লেখাপড়া করছে, কারও ঘরে ঘরোয়া পরিবেশে অতিথিরা রয়েছে এ সময় নিকট দূরত্ব থেকে সন্ধ্যা অথবা গভীর রাত পর্যন্ত মাইকের বিকট আওয়াজ ঘরের মানুষজনকে অসহনীয় করে তোলে।
বিগত কয়েক বছরে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ কম হচ্ছে ঠিকই কিন্তু যখনই হচ্ছে তখনই কিলোমিটার ব্যাপী মাইক লাগিয়ে বিকট শব্দে মাইজ বাজানো হচ্ছে । ইদানীং পন্য বিক্রি অথবা প্রচারনার কাজেও মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে পাড়ার চিপা গলি হোক জনবহুল বাজার হোক সকাল থেকে গভীর রাত অবধি চলে পন্য বিক্রির নামে শব্দ সন্ত্রাস । পেশাগত কারনে আমি বহু বছর থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাস করতেছি। বাসার নীচে গাড়ী স্টার্ট দিলে ইঞ্জিনের আওয়াজে কারো সমস্যা হলে পুলিশ ডাকার ঘটনা আমি বহুবার দেখেছি।কিন্তু নিজ জন্মভূমিতে হাইড্রলিক হর্ন,মাইকের আওয়াজে কান জ্বালা পালা হলেও জনগনকে প্রতিবাদ করতে দেখেনি বলে অবাক হই। আর প্রতিবাদ করলেই তো হয়ে যেতে হবে নাস্তিক মুরতাদ না হয় সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী । অথবা ভারত না হয় পাকিস্তানের দালাল।আসুন আমরা দলমত,জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের এই জন্মভূমিকে শব্দ সন্ত্রাসের হাত থেকে উদ্বার করি।